Tuesday 20 April 2010

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুফল পেতে আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন

গনমাধ্যমের সাথে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র মতবিনিময় সভায় বক্তারা
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুফল পেতে আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন

ধূমপান ও তামাকজাতদ্যব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আইনটি প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। তাই আইনটির সুফল পুরোপুরি পেতে এই আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন। আজ সকাল ১১.০০টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন বক্তারা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যায়যায়দিন এর রেজাউল করিম, ইত্তেফাকের মুন্না রায়হান, ভেরের কাগজের কবির হোসেন, দৈনিক সংগ্রামের সাদেকুর রহমান, দৈনিক ডেসটিনির সুলতানা কণা, বাংলাদেশ সময় এর সঞ্জয় কুন্ড, আমাদের সময় এর শফিকুল ইসলাম জুয়েল, দৈনিক সংবাদ এর নিখিল ভদ্র, দৈনিক সংবাদপত্রের প্রশান্ত মজুমদার, দৈনিক ভোরের ডাক এর সিরাজুজ্জামান, দৈনিক খবরপত্র এর ওবায়দুর রহমান শাহীন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুবুল আলম ।

সভায় বক্তারা বলেন, আইনটির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানিগুলো আইনকে পাশ কাটানোর নিত্য নতুন কৌশল আবিস্কার করছে। কোম্পানীর এ সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি আইনকে জনকল্যাণমূখী করে বাস্তবায়নে জনসাধারনের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, এফসিটিসি বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিষয়ক চুক্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ চুক্তি গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক এ চুক্তি স্বাক্ষর ও র‌্যাটিফাই করেছে। তাই এফসিটিসি’র আলোকে আইন উন্নয়নের বাদ্যবাধকতা রয়েছে। এফসিটিসি অনুসারে বিজ্ঞাপন বন্ধ, চোরাচালান রোধ, মোড়কের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ককারণবানী, কর বৃদ্ধি, শুল্কমুক্ত বিক্রি বন্ধকরণ, অধূমপায়ীর অধিকার সংরক্ষন ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য দিয়ে আইনের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে হবে।

তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্য বলতে তামাক হতে তৈরী যে সকল দ্রব্য ধূমপানে মাধ্যমে শ্বাসের সাথে টেনে নেয়া যায় অর্থাৎ বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রণ (মিক্সার) ও ইহার অন্তর্ভুক্ত হবে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাদা পাতা, জর্দ্দা, গুল, খৈনী ইত্যাদি তামাকজাতদ্রব্য ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই এ সকল দ্রব্যসহ অন্যান্য তামাকজাতদ্রুব্য গুলো আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আইনে পাবলিক প্লেসের আওতায় রেষ্টুরেন্ট এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে আনা হয়নি। এসকল স্থানকে ধূমপানমুক্ত স্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এবং পাবলিক পে¬স ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত না করার প্রেক্ষিতে মালিক, ম্যানেজার, তত্ত্বাবধায়ক ব্যক্তিকে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান করতে হবে।

তারা আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে অবৈধ বিজ্ঞাপনের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে যা তামাক কোম্পানীর জন্য খুবই সামান্য। এই জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তামাক কোম্পানির নাম, রং, লোগো দ্বারা উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারতে হবে।

বর্তমানে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ৩০% শতাংশ জায়গাজুড়ে সতর্কবাণী পদর্শিত হলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ নিরক্ষর লোকের দ্বারা তা পড়া সম্ভব নয়। তাছাড়া একটি ছবি কয়েক হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী তাই অনেক উন্নত দেশের মত আমাদের দেশেও প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদর্শনের বিধান করতে হবে। পশাপাশি স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থা ও কোম্পানি কর্তৃক আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া আইন উন্নয়নে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির ও সিগারেটের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের সু স্পষ্ট বিধান এবং সকল নাগরিককে আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে মামলার করার অধিকার আইনে অর্ন্তভুক্তির দাবী জানান বক্তারা।

দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়

দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে আমদানীকৃত গুড়ো দুধে মেলামিন এর অস্তিত্ব সনাক্ত হওয়া, সনাক্ত হওয়ার পরেও তা বহাল তবিয়তে বাজারে বিক্রয় অব্যাহত, দুধে মেলামিন আছে কি নাই এর ফলাফল নিয়ে বিশেষজ্ঞগণের মতবিরোধ, মতবিরোধ দুর করতে সরকারের ভূমিকা রহস্যজনক, মিথ্যা প্রলুব্ধকরণ বা ধোঁকাবাজির বিজ্ঞাপন ইত্যাদির কারণে সর্বসাধারণ আজ দিশাহারা। আজ ২২ নভেম্বর ২০০৮ শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যেগে পবা মিলনায়তনে বেলা ৩টায় দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক আবু জাফর মহাম্মদ কেমিস্ট্রি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক নিলুফার নাহার কেমিস্ট্রি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ঠ লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে কামাল পাশা চৌধুরী।

প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত খাদ্য পাওয়ার। আমরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রতিদিন আমরা বাজার থেকে যা ক্রয় করি আদৌ এই গুলি কি নিরাপদ এবং এর মধ্যে যথাযোগ্য পুষ্টিমান থাকে ? বাজারে অধিকাংশ মাছ, মাংস,সবজি, দুধ, ফল-মূল নানা রকম বিষাক্ত ভেজালে পূর্ণ। পচঁন ও পোকা রোধ, রং সজীব রাখা ইত্যাদি কারণে এ সব খাদ্যে প্রয়োগ হচ্ছে ডিডিটি ও হেল্টাকেরা জাতীয় পেস্টিসাইড, ফরমালীন সহ বহু রকম রাসায়নিক উপাদান যে গুলো আমাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য খুবই হুমকিস্বরুপ। রান্নার পরও এর প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। বিভিন্ন ধরণের ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রতি বছর ২ লক্ষ লোক ক্যন্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী জানা যায় খাদ্যমান সঠিক না থাকার কারণে এবং ভেজাল মিশ্রনের ফলে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৮% লোক ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, ১ লক্ষ লোক প্রতি বছর কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চারা অপুষ্টি ও শারীরিক বিকলাঙ্গ হচ্ছে এবং শিশুদের মস্তিস্ক স্বাভাবিক ভাবে বিকাশ লাভ করতে পারছে না।

সেখানে সরকারও এক ধরণের গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে চলার নীতি অবলম্বন করে চলেছে। সরকারের এ উদাসিনতার কারণে বাংলাদেশে প্রস্তুতকারী ও আমদানীকারকদের মধ্যে ব্যবসায়ীক উদ্যেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে এ ধরণের বিষাক্ত খাদ্য নিয়ম বর্ভিূতভাবে আমদানী হচ্ছে। ৩ টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফলাফলে ৮ টি গুড়ো দুধের মধ্যে বিষাক্ত মেলমিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় অথচ আদালতের এক বিভ্রান্তিকর রায়ের কারণে এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারও অব্যাহত আছে। এগুলো ব্যবহারের ফলে সর্বসাধারণের ক্ষতির দায়-দায়িত্ব কে বহন করবে। গুড়ো দুধ ছাড়াও বাজারে অনেক রকম শিশুদের খাদ্য যেমন চকোলেট, ক্যান্ডি, চানাচুর, চিপস,আচার, হজমী,আইসক্রীম, ড্রিংকসসহ নানা ধরনের ভেবারেজ ব্যাপক ভাবে বিক্রয় হচ্ছে যে গুলোর মাঝে প্রচুর পরিমান নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত ক্যামিকেল বিদ্যমান। তা ছাড়াও এ গুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন গুওলো মিথ্যায় ভরপুর।

যা জরুরী ভিত্তিতে করণীয়:

১.খাদ্যের উপযুক্ততা নিশ্চিত না হয়ে শিশুখাদ্য বাজারজাত করা যাবে না; যদি বাজার জাত করা হয় তাহলে শিশুর স্বাস্থ্যগত অপুরনীয় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এবং ক্ষতি হলে এর দায়ভার বহন করবে কে ?
২. মিথ্যা প্রলুব্ধকরণ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে; কেননা খাদ্যের গুনাগুণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয় আমাদের সামনে উপস্থাপিত বিজ্ঞাপনের ভাষাসমূহ।
৩. বানিজ্য মন্ত্রণালয় নয় খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক একটি শক্তিশালী সংস্থা গঠন করতে হবে; স্বাস্থ্য নিয়ে কোন ধরণের বানিজ্য নয় সেহেতু স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত আলাদা সংস্থা হলে তারা শুধু এ বিষয়টির তদারকি করবে।
৪. বিষাক্ত খাদ্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ভোক্তা অধিকার আইন অবিলম্বে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
৫.বাজারজাতকৃত সকল খাদ্য দ্রব্যের ভেজাল ও বিষমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে;
৬ ভোক্তা অধিকার আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত আইনেই দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান






পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন

শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান

শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, আজ ২৭ এপ্রিল ২০০৮ পবা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বক্তারা বলেন, শেভরনের ভূতাত্ত্বিক জরিপের কারণে প্রচন্ড শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে, শেভরন কোম্পানির লোকেরা ভারী যন্ত্রপাতি ও যানবাহন নিয়ে প্রবেশ এবং বনাঞ্চলের প্রায় ১০০/১৫০ জন লোক প্রবেশ করার প্রেক্ষিতে বনের নিরবতা বা বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, সংরক্ষিত বনের ভিতর জরিপকার্যে নিয়োজিত লোকবল অবাধে ধূমপান করছে।

গত ২৬ এপ্রিল ২০০৮ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র একটি প্রতিনিধিদল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিদর্শনে উদ্যানে এই অবস্থা লক্ষ্য করেন। এর প্রেক্ষিকেই পবা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলে আশেপাশের এলাকার কাচা-পাকা বাড়ীতে ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র কম্পনের ফলে অনেক বন্য প্রাণী বন ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লাউয়াছড়া বনে শুধু শেভরন নয়, গ্রামীণ ফোনও কোম্পানির অপটিক্যাল ফাইভার স্থাপনের জন্য খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন সংরক্ষন বিভাগের কর্মকর্তাদের এই কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্মকর্তাগণ গ্রামীণ ফোনের এ কার্যক্রম সম্পর্কে জানে না বলে পরির্দশন দলের প্রতিনিধিদের জানায়। রেল লাইনের ধারে গর্ত করে এধরনের কার্যক্রম রেল চলাচলের জন্য হুমকি বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ বস্তকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আমাদের বনকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বনকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা না করার কারণেই বনকে অবাধে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু বন আমাদের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। সরকার বন রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একদিকে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে। অপরদিকে এই ধরনের কোম্পানি ও দেশী কিছু স্বার্থানেষী কর্মকর্তা বা ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরামর্শ ও সহযোগিতার কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে। বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞদের মতে বন্য প্রানীরা তাদের বসবাসের জন্য অধিকতর নির্জন স্থানকেই বেছে নিয়ে থাকে। শেভরন কোম্পানীর এই জরিপের ফলে বনের সেই নির্জনতা ও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়েছে। ফলে সংরক্ষিত বনে বসবাসকারী সকল প্রানীর আবাসন বিন্যাস ও জীববৈচিত্র হয়েছে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ এধরনের ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা ও পরামর্শ, তেল কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নামে তেল অনুসন্ধানে বা উত্তোলনের কাজ চালায়। তেল উত্তোলন ও অনুসন্ধানের নামে ধ্বংস করে পরিবেশ, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। ১৯৯৭ সালে ১৪জুন মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের গ্যাসকূপে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পরে বনের ভিতর দিয়ে ইউনোকল গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর ফলে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।

বক্তারা বলেন বিদেশী কোম্পানিগুলো কি আইনের উর্দ্ধে? দেশের পরিবেশবাদীদের অবজ্ঞা করে বিভিন্ন কোম্পানিকে কার্যক্রমের নামে পরিবেশ ধ্বংশের অনুমোদনের উদাহরণ এই প্রথম নয়। আইনকে ভঙ্গ করে এধরনের অনুমোদন কারা প্রদান করে? কি তাদের লাভ? এদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বক্তারা বলেন আমাদের দেশে কাজ করতে হলে অবশ্যই দেশের সকল আইন ও প্রতিষ্ঠানকে মান্য করে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের আইন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবজ্ঞা দেশের সংবিধান, সরকার ও জনসাধারণের প্রতি অবজ্ঞাও। একটি স্বাধীন সার্বভোম দেশে বিদেশী কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতামূলক কার্যকলাপ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

বক্তারা লাউয়াছড়া সংরক্ষিত উদ্যানে শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপ নিষিদ্ধ, জরিপের কারণে ক্ষতিপুরণ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ, বিগত দিনে ও বর্তমানে দেশের বন ধ্বংশ করে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমোদনকারী ও সমর্থনকারী কর্মকর্তাদের আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তি প্রদান, ভবিষ্যতে সংরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা অনুমোদন না করা, আগামীতে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দেশের ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইনসহ সকল আইন মেনে অনুমোদন দেয়া, অনুসন্ধানকারী কোম্পানির কাছ থেকে বন্ডমানি নেয়া, বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্য করা, সংরক্ষিত স্থানে সরকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে অগ্রধিকার দেওয়া, যে কোন দূর্ঘটনার দায় কী হবে তা সুস্পষ্টভাবে অনুসন্ধানের চুক্তিতে উলে¬খ্য করা, চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং জনগণের মতামত নেয়ার দাবি করেন। বক্তারা বন রক্ষায় সরকার, গণমাধ্যমকর্মী, রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী, শ্রমিকসহ প্রতিটি স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, তেল গ্যাস ও বন্দর ও বিদ্যু রক্ষা কমিটির ইঞ্জিঃ মোঃ শহিদুল্লাহ এবং ব্যারিষ্টার রায়হান খালিদ।

Monday 19 April 2010

বিড়ি কারখানায় কাজ করার কারণে শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে।

বৃহত্তর রংপুর ও কুষ্টিয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রচুর বিড়ি তৈরীর কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের পাশাপাশি প্রচুর শিশুও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছে। এসব শিশুরা সাধারণত নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্যহীন পরিবারের সন্তান। ঝুঁকিপূর্ণ বিড়ি শিল্পে কাজ করার কারণে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ভবিষ্যতে সু নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে।

যে বয়সে ছেলেরা সকালে ¯কুলে যায়, বিকেলে পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যায়, সে বয়সেই সকালের পড়া আর স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে কোমলমতি এই শিশুদেরকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেমে পড়তে হয় উপার্জনের কাজে। ফজরের আজান দিলেই তারা বিড়ি কারখানায় কাজ করতে আসে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। আর্থ সামাজিক অবস্থা খারাপ এবং বিকল্প কাজের সুযোগ না থাকায় শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে। দারিদ্রতার কারণেই শিশুরা এধরনের ঝুঁকিপূর্ন কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

বিড়ি কারখানায় শিশুরা সধারণত কয়েক ধরনের কাজ করছে:
১) তামাক গুড়া করে বিড়ি তৈরীর উপযোগী করা
২) কাগজের রোল তৈরী করা
৩) কাগজের রোলে তামাক ঢুকিয়ে বিড়ি তৈরী করা
৪) বিড়ি প্যকেজিং ইত্যাদি

আন্তর্জাতিক লেবার অফিস, ঢাকা এর ২০০৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় রংপুরের বিড়ি কারখানাগুলোয় ১৭,৩৪৪ জন শিশু শ্রমিক যার ৯,২১৩ জন ছেলে শিমু ও ৮,১৩১ জন মেয়ে শিশু, টাঙ্গাইলের কারখানাগুলোয় ১,৫৭৭ জন শিশু শ্রমিক যার ৬৪৭ জন জেলে শিশু ও ৯৩০ জন মেয়ে শিশু এবং কুষ্টিয়ার কারখানাগুলোয় ২,২৯৬ জন শিশু শ্রমিক কাজ করছে যার ১,৭০১ জন ছেলে শিশু ও ৫৯৫ জন মেয়ে শিশু।

গবেষণার এই তিনটি অঞ্চলের বাইরেও অনেক শিশু বিড়ি কারখানায় কাজ করছে। উপরিউক্ত গবেষণাতেই দেখাযায় গড়ে প্রতিটি পরিবারে রংপুর এলাকায় ২.০৯ জন, টাঙ্গাইল এলাকায় ১.৪৪ জন ও কুষ্টিয়া এলাকায় ১.২০ জন শিশু বিড়ি কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত।

১৯৬৫ সালের কারখানা আইনের ৮৭ ধারা অনুসারে কোন কারখানায় যদি এমন ধরণের কাজ হয় যার ফলে এতে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির দৈহিক আঘাত প্রাপ্ত, বিষক্রিয়া বা দৈহিক আঘাতপ্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে ঐ কাজকে বিপদ জনক কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। বিড়ি কারখানায় কাজের ফলে এতে যুক্ত ব্যক্তিদের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে যা তার শরীরে স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সুতরাং অবশ্যই এটি একটি বিপদ জনক কাজ। এই আইনের ৮৭(গ) ধারায় বিপদ জনক কাজে নারী কিশোর ও শিশুদের নিয়োগ স¤পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন ১৯৩৮, শিশুশ্রম বন্ধ আইন ১৯৩৩, শিশু আইন ১৯৭৪ ইত্যাদি আইনেও শিশু শ্রমের ব্যপারে বিভিন্ন বিধি নিষেধ এবয়
নিষেধ অমান্যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

বিড়ি কারখানা শিশু শ্রমিকেরা মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠা এ কারখানায় শিশু শ্রমিকদের ঝুকিঁর মধ্যে কাজ করতে হয়। বিড়ি তৈরীর সময় তাদের নাকমুখ দিয়ে তামাকের গুড়া প্রবেশ করছে অহরহ। এছাড়া কাজের প্রতিটি মুহুর্ত তারা কাটাচ্ছে তামাকের উৎকট গন্ধের মধ্যে এভাবে তারা মারাত্বক রোগ ক্যান্সারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্সারের পাশাপাশি তারা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, যক্ষা, চোখের বিভিন্ন রোগসহ নানাধরনের জটিল অসুখে ভুগছে। কারখানা গুলোতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থাও নেই। শ্রমিকদের ফ্রি ধূমপানের ব্যবস্থা থাকায় অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করছে। এ সুযোগে বিড়ি তৈরীর সাথে জড়িত সকল শিশু অল্প বয়সেই ধূমপায়ী হয়ে পড়ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে এ সব শ্রমিকদের বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হবার ঝুকিঁ অনেক গুন বেড়ে যাচ্ছে।


আমাদের দেশে শিশুর সংগা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ অনুসারে ১৮ বছরে নীচে সকলকে শিশু বলা হলেও আমাদের দেশে বিভিন্ন আইনে শিশুর সংগায় বিভিন্ন বয়সসীমার কথা বলা হয়েছে। কারখানা আইনের ৬৬ ধারা অনুসারে ১৪ বছরের কম বয়সী কোন শিশুকে কোন ভাবেই কারখানায় নিযুক্ত করা যাবে না। ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুকে শর্ত পুরণ সাপেক্ষে কারখানায় নিযুক্ত করা যাবে। তবে এসব শিশুকে দৈনিক ৫ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। এবং তাদের কাঝের এই ৫ ঘন্টা সকাল ৭টা থেকে সন্ধথ্যা ৭টার মধ্যে হতে হবে। তাছাড়া তার এই কর্ম ঘন্টার মধ্যে তার বিনোদন ও বিশ্যামের ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু বিড়ি কারখানায় শিশু শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি টানা কাজ করছে। এবং সর্ব নিম্ন ৫ বছরের শিশুথেকে সব বয়সী শিশুরা এই কাজে যুক্ত।

একহাজার বিড়ি বাধলে একজন শিশু মজুরী পায় ৯ থেকে ১১ টাকা (স্থান ভেদে ভিন্নতা আছে)। একজন শিশু সারাদিন কাজ করে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আয় করতে পারে।

বিড়ি কারখানায় কাজ করার কারণে শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। লেখাপড়া শিখে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন কুঁড়িতেই নষ্ট হচ্ছে। ফলে তারা একটি দারিদ্রের দুষ্টু চক্রে বাধা পড়ে যাচ্ছে। বাপ-দারা যে দরিদ্র জীবন যাপন করেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় তার থাকছে না। এছাড়া তামাকের মত ক্ষতিকর দ্রব্যের সংস্পর্শে জীবসের একটা এল্লথযোগ্য অংশ কাটানোর কারণে এবং তামাকের ডাস্ট প্রতিনিয়ত শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার ফলে অল্প বয়সেই এরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্ম ক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে তার দারিদ্রতা স্থায়ী রূপ লাভ করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও তা মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিড়ি কারখানার পাশাপাশি বাংলাদেশের তামাক চাষেও প্রচুর শিশু শ্রকি কাজ করছে যার ফলেও নষ্ট হচ্ছে তার ভবিষ্যত এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হওয়ার ঝুঁকি থাকছে তার।

আন্তর্জাতিক শিশু সনদ অনুসারে শিশুর স্বুস্থভাবে বেড় ওঠা ও তার মৌলিক চাহিদা পুরণের নিশচয়তা থাকতে হবে। এবং তা পুরণ করবে রাষ্ট্র। তাছাড়া আমাদের পবিত্র সংবিধানেও শিশুদের স্বুস্থ-সুন্দরভাবে বেড়েওঠার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও তার সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের করণীয় বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।