Thursday 11 November 2010

ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা দখলবাজদের শাস্তি চাই



ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা দখলবাজদের শাস্তি চাই
চারশত বছরের পুরনো মোগল রাজধানী ঢাকার অন্যতম কীর্তি লালবাগ কেল্লা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবময় নিদর্শন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে মোগলদের সবচেয়ে বড় অবদান স্থাপত্য নির্মাণ। বাংলাদেশের সভ্যতা সেসব বিরল মোগল স্থাপত্যের কারণে কীর্তিমান ও বিশ্বদরবারে পরিচিত তার মধ্যে লালবাগ অদ্বিতীয়। কেননা লালবাগ দূর্গ বাংলাদেশে মোগল আমলের একমাত্র প্রাসাদ দূর্গ এবং এর আদলে আর কোন দূর্গ মোগল সাম্রাজ্যে কোথাও নির্মিত হয়নি। তাই লালবাগ কেল্লা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এক অদ্বিতীয় মানবকীর্তি।

এই মোগল কীর্তির গুরুত্বকে উপলব্ধি করেই ইতিহাসবিদ, নগরবিদ, স্থপতি এবং সভ্যতা সচেতন নানা দেশের নাগরিকরা একে “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ” বা বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোর কাছে দাবি জানিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তালিকাতেও লালবাগের কেল্লা বা প্রাসাদ দূর্গ একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু যে প্রতœকীর্তি একই সঙ্গে বাংলাদেশের এবং বিশ্বসভ্যতার অংশ তাতে আজ বেদখল নিয়েছে প্রভাবশালী দখলবাজ চক্র।

কেল্লার পশ্চিম দিকের দেয়াল ভেঙ্গে তারা তুলেছে নিজেদের আবাস। তাদের কেউবা কেল্লার দেয়ালেই ভিৎ গেড়েছে নিজেদের ঘর-বাড়ির। দক্ষিণ দেয়ালের পাশে যে রাস্তা ছিল তা তো অনেক কাল আগেই বিলুপ্ত হয়েছে এবং তাই সভ্যতা বিনাশী এই দুষ্টচক্র অনায়াসেই ঢুকে গেছে দূর্গ প্রাকারের ভেতরে এবং কেউ কেউ ঠাই নিয়েছে দূর্গ প্রাকারের প্রায় চার ফুট প্রশস্থ দেয়ালে। তাছাড়া লালবাগ কেল্লার দেয়াল জুড়ে রয়েছে নানা পোস্টার হেন্ডবিল এবং এমনকি পেরেক ঠুকে টিনের সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। কেল্লা মেরামতে ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র এর স্থাপন-শৈলীর দিকে লক্ষ্য রাখা হয়নি। বরং ঠিকাদার সুলভ সংস্কার করতে গিয়ে কেল্লার ভেতরে অবস্থিত মসজিদের গা থেকে খসিয়ে দেওয়া হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর মোগল কারুকাজ এবং লাল বাগের দৃষ্টি নন্দন লাল রং মুছে ফেলে মসজিদের দেয়ালে দেওয়া হয়েছে সাদা রং এর প্রলেপ।

ইতিহাসের পরিহাসই বলতে হয় বার ভূইয়া ও আফগান বিদ্রোহ দমন করে আরাকান মগ ও পর্তুগীজ দস্যুদের বিতাড়িত করে একদা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর রাজমহল থেকে সরিয়ে এনে বাংলার শাসন কেন্দ্র যে ঢাকাতে স্থানান্তরিত করেন তাই আজ এদেশের ভ’মিদস্যুরা দখল করে নিচ্ছে। মোগলদের প্রাসাদ দূর্গও আজ অরক্ষিত। এই ইতিহাসের পরিহাসকে অবশ্য বিশেষ মাত্রা দিয়েছে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। কেল্লার সীমানার ভিতরেই গড়ে উঠেছে এ বিভাগের দপ্তর। প্রতœস্থলের সিমানার ভিতরে স্থাপনা নির্মাণ বাংলাদেশে সরকারের পুরাকীর্তি আইনের সুষ্পষ্ট লংঙ্ঘন।
  

১৯৬১ সনের পুরাকীর্তি আইনের ১২ (৩) এর সি ধারা অনুযায়ী এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারেও কেল্লার ভেতরে কোন স্থাপনা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে না।

কোন বিশেষ্জ্ঞ নয় লালবাগ কেল্লা দেখতে এসে একজন সাধারণ দশৃকও বুঝতে পারবেন এখানে পুরাকীর্তি আইনের বিধিবিধানের কোন প্রয়োগ নেই। দৃশ্যমান শুধু বিধির লংঙ্ঘন রাষ্ট্রের আইন কানুন বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে অবৈধ দখলদাররা যে কি ভয়ংকর হয়ে উটেছে তার চরম দৃষ্টান্ত লালবাগের সীমানার ভিতরে ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনটি বাড়ি। একটি দেশের প্রাচীন কীর্তিও যখন সেই দেশের অবৈধ দখলবাজদের তখন সে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে গর্ব করার কিছুই থাকে না। লালবাগের দুর্গের সীমানার ভেতরে এবং দূর্গের দেয়ালের গায়ে দেয়াল গেথে যে দখলবাজরা নিজস্ব ঘরবাড়ি তুলছে তারা এদেশের ইতিহাসের স্মারককে ধবংস করছে। দেশের মানুষের সম্পদ বিনষ্ট করছে। কারণ একটি দেশের পুরাকীর্তি সেদেশের সব মানুষের; সরকারের নয়। তবে সরকারের দায়িত্ব জনগণের সেই সম্পদ সুরক্ষা করা কিন্তু তা সুরক্ষিত না হয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

লালবাগ কেল্লাকে কেন সুরক্ষিত করা প্রয়োজন সে বিষয়ে আমরা সরকারকে অবহিত করতে চাই। লালবাগ একটি মাত্র দূর্গই নয়, পূর্ব পশ্চিমে লম্বা ২০০০ ৮০০ ফুট মোগল স্থাপনা র্৩-র্র্র্র্৯র্ পুরো দেয়াল বেষ্টিত চৌহদ্দিতে রয়েছে তিন তলা তোরণ। পরিবিবির মাজার, মসজিদ এবং মোগল যুগের দুর্লভ নিদর্মন সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর। স্থাপত্য এবং অন্যান্য প্রতœবস্তু দেখে মোগল সভ্যতার তাৎপর্য অনুভবের এক অদ্বিতীয় স্থান লালবাগ কেল্লা। তাই এই পুরাকীর্তি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সব্বোচ্চ সতর্কতা ও যতœ দাবি করে।

বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত প্রাচ্যের ভেনিস বলে আখ্যায়িত মোগল নগরী ঢাকার গৌরবময় কীর্তি লালবাগ কেল্লা। এ প্রাচীন কিির্ত বহু যুগের নানা ঘটনার সাক্ষী । ১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহের সময় দেশপ্রেমী শহীদ সিপাহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই দুর্গ। ইংরেজরাও এই মোগলকীর্তিকে দীর্ঘকাল অযতœ করেছে। তাই সিপাহী বিদ্রোহের পর এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পুলিশ বিভাগের প্রধান কার্যালয়। ১৯৫৩ খৃষ্টাব্দে পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের জিওসি (পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট) মোহাম্মদ আইয়ুব খানের নেতৃত্বে পুলিশ বিদ্রোহ দমনের নামে নিরীহ পুলিশদের হত্যা করা হয় এই দুর্গের ভেতরে।

১৯১০ খৃস্টাব্দে লালবাগ দূর্গপ্রাকার সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন হয়। ১৯৬২ তে কেল্লার চৌহদ্দির অন্যান্য স্থাপত্য-নিদর্শনের রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব লাভ করে এই বিভাগ। ১৯৭১ এর পর দুর্গের ভেতরের সব অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণ করা হয়। ১৯৭৪ এর মার্চে লালবাগ কেল্লার জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। মোগল আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক দেশি-বিদেশী পর্যটক, সার্ভেয়ার, ইতিহাসবিদ, পুরাতাত্ত্বিক ঢাকা নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং লালবাগের কেল্লা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। ঢাকার চারশত বছর পূর্তি উপলক্ষে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ ঢাকার উপর উনিশটি গবেষণা-গ্রন্থ প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এসব গ্রন্থে লালবাগ কেল্লা বিশেষ গুরুত্বে উপস্থাপিত হবে।

প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন হওয়ার পর সেই ১৯১০ খৃষ্টাব্দেই লালবাগ কেল্লার সীমানা ও নকশা তৈরি করা হয়। এই নকশা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এবং পৃথিবীর অন্য অনেক মোহাফেজখানায় সংরক্ষিত রয়েছে। এর নকশা মুদ্রিত অবস্থায় এবং এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। ঢাকা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রতিবেদন ১৯১৭(প্যট্রিক গেড্ডেস) অনুযায়ী লালবাগের আয়তন ২২ একর।
 

দখলের ফলে আজ আয়তন ১৭একর। বর্তমানে এই আদি নকশার দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায় অবৈধ দখলদাররা পশ্চিমের দেয়াল ভেঙ্গে কিভাবে নিজস্ব আবাস গড়েছে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আবুল হাশেম, রেলিন ও বাবুল চৌধুরী এসব বাড়ির মালিক এবং আমরা খোজ নিয়ে জেনেছি যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগও এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। লালবাগ কেল্লা রক্ষায় কতৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণের প্রমাণ মিলে লামি/সংরক্ষণ/২২/ঢাকা-১/১০/১৯২/২এই চিঠিতে, এই চিঠি কেল্লার দেয়াল ঘেষে উঠা একটি স্থাপন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে লিখা হয়, কিন্তু প্রায় এক বছর পূর্বে লেখা হলেও কেল্লার প্রাচীরে ৫ফিট দূরের বাড়িটিতে আজও চিঠিটি পৌছেনি। কতৃপক্ষের অবহেলায় কেল্লার দেয়াল ইতিমধ্যে স্থাপনাটি পাঁচতলা তৈরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। লালবাগ কেল্লার ভেতরে অবস্তিত প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দপ্তরের দালান থেকে কয়েক গজ দূরেই গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ঘরবাড়ি।

১৯৬৮ পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে পুরাকীর্তি ধ্বংস সাধন, ক্ষতিসাধন, লেখা বা খোদাই করা যাবে না এবং ২৬নং অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি বাণিজিক উদ্দেশ্যে কোন সংরক্ষিত পুরাকীর্তির বা তার অংশ বিশেষ আলোকচিত্র গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু কতৃপক্ষের অনুমতিক্রমে লালবাগ কেল্লায় হরহামেশাই বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন তৈরি সুটিং করার সময় অবকাঠামোর ব্যাপকক্ষতি সাধন করছে।

লালবাগ কেল্লা দেখভাল করার দায়িত্ব সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের। কেল্লার সীমানার মধ্যেই যে অবৈধ স্থাপনপা হয়ে গেল তা বোঝার জন্য তো তার গবেষণা করতে হয় না। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা বোধহয় ভুলে গেছেন যে সরকারি কোষাগার তেকে তাদের বিভাগ চালানোর জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় তা এদেশেরই জনগণের অর্থ। জনগনের প্রতœসম্পদ জনগণের অর্থেই রক্ষণাবেক্ষনের জন্য রাষ্ট্র এ বিভাগ পরিচালনা করে। এ লক্ষ্যে ানেক আইন কানুন ও বিধি বিধানও রয়েছে। আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই এক বিভীষিকাময় অবস্থার মধ্যে এদেশের পুরাকীর্তি নিপতিত।

সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষতি এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন ২০১০ বিল গত ২৭ জনু জাতীয় সংসদদে পাস হয়েছে। পর্যটন বিষয়ে যে আইন করেছেন তা আরও সর্বনাশ ডেকে আনবে। এ আইনের কাছে পুরাতত্ত্ব আইন ও ইমারত বিধি সবই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কারণ এতে বলা হয়েছে “ পর্যটন শিল্প রহিয়াছে অথবা পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রহিয়াছে এমন কোন এলাকাকে চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হইলে উক্ত এলাকাকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করিতে পারিবে।’ 

আইনে আরো বলা হয়, পর্যটন সংরক্ষিত এলাকায় বিশেষ পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করা যাবে। পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে যেকোন ধরনের কার্যক্রমে বিধি নিষেধ আরোপ করা যাবে। সরকার নিজ উদ্যোগে কিংবা যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে পারবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বিনোদনও সেবামূলক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। পাস হওয়া আইনে পর্যটন আইনের প্রাধান্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনে বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।’ এ আইনের সুবিধা নিয়ে কর্পোরেট পুজির এই দু:সময়ে কোন সংস্থা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানোর নামে লালবাগ কেল্লার ইজারাদারি কব্জা করতে পারে।

ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থার কাছে এদেশের পুরাকীর্তি নিরাপদ নয়। সরকারি দেখভালই যেখানে অত্যন্ত নাজুক সেখানে অন্য কোনো সংস্থাকে কে নিয়ন্ত্রন করবে ?
সমস্যা আছে, প্রতিকার নেই এ কথা সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরা চাই সরকার পর্যটন আইন বাতিল করে দেশের পুরাকীর্তি সংরক্ষণে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবেন এবং অনতিবিলম্বে লাল বাগ কেল্লার ভেতরের অবৈধ ৩ টি বাড়ি ও কেল্লার দেয়ালের গায়ে দেয়াল লাগিয়ে যেসব ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে তা উচ্ছেদ করে দেশের পুরাকীর্তি রক্ষার দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।

রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় দাবি

এদেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় রেল অত্যন্ত কার্যকর ও পুরানো একটি বাহন যা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেইে মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। এটি আমাদেরও যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত ছিল। সময়ের পরিক্রমায় আর অবহেলায় আজ রেলের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ডাবল লাইন ও ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ, দক্ষ লোকবল বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ইঞ্জিন ও বগি সংগ্রহ, রেলের কারখানা কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। যা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহজেই ভূমিকা রাখতে পারবে। পৃথক মন্ত্রণালয়ই এর সমাধান।

দূষণ, জ্বালানি ব্যয়, দূর্ঘটনা ও দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু-আর্থিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ, যাতায়াত সংকট কমাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সিলেট, ঢাকা থেকে পঞ্চগড়, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, ঢাকা থেকে খুলনাসহ দেশের সকল জেলার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ডাবল রেল লাইন চালু করা দরকার।

ক্রমবর্ধমান মানুষের যাতায়াত চাহিদা পুরণ করতে রেল ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করার বিকল্প নাই। রেল পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বিবেচনায় ভূমি ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক পথের জন্য অনেক বেশি জমি অধিগ্রহণ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। দূষণ, জালানি ব্যয়, চলাচলের জন্য দূর্ঘটনা ও আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে দূরপাল্লার যাতায়াতের ক্ষেত্রে রেলকে প্রাধান্য দেয়া দরকার।


Saturday 6 November 2010

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেই তামাক চাষ বন্ধে দায়িত্ব নিতে হবে

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেই তামাক চাষ বন্ধে দায়িত্ব নিতে হবে

তামাক কোম্পানির কারণে কৃষি জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন ঠিক মতো খেতে পারে না। খাদ্য যোগান যেখানে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায় তামাকের আগ্রাসী বিস্তার দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত করছে। তাই তামাক চাষ বন্ধে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
হবে।



তামাক চাষ বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমি হ্রাসের পাশাপাশি গোখাদ্য সংকট, শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত, তামাকজনিত রোগ বৃদ্ধি, সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তামাক চাষের জন্য পার্বত্য এলাকার জমি ও নদীর তীর দখল হচ্ছে অত্র এলাকায় কৃষিজমি হ্রাসের প্রেক্ষিতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বন উজার করে কাঠ কাটা হচ্ছে, তামাক শুকানো হচ্ছে। গাছ কাটার প্রেক্ষিতে পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এ ধরনের বিদেশী গাছ লাগাচ্ছে বনাঞ্চলে। বিদেশী গাছ আমাদের জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।

ক্রমাগত তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এজন্য তামাক কোম্পানিগুলো নতুন নতুন এলাকার কৃষি জমিতে দরিদ্র কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। একটা সময় পর জমিগুলো যে কোন খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তামাক চাষের সময়কালটা এমন, তামাক চাষ করার কারণে সব মৌসুমের খাদ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা দরকার। কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারগন তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে খাদ্য শস্য উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান করে তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষনে তামাক চাষ এর ক্ষতিকর দিক ও তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণ. কৃষি জমিতে তামাক চাষ বন্ধ করা এবং কৃষি নীতিমালায় কৃষি পণ্যের তালিকা থেকে তামাককে বাদ দেয়া, চলনবিল (পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ), মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষ অবিলম্বে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, তামাক চাষে সার, কীটনাশকসহ সকল ধরনের সুবিধা নিষিদ্ধ করা, তামাকের পরিবর্তে খাদ্য শস্য উৎপাদনে কৃষকদের সহযোগিতা প্রদান এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং তামাক কোম্পানি কার্যক্রমে কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ না করতে নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানান।

এ সময় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। কৃষি জমির উর্বরতা রক্ষা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে তাদের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।