গত ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল নদী দিবস। এই দিনে নদীকে ভালোবাসে এমন দুনিয়াব্যাপী কোটি মানুষ নদীর পক্ষে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় মনে প্রাণে। নদীর প্রতি ভালোবাসার এই দিবসে কয়েকজন নদী প্রেমিকের সাথে গিয়েছিলাম বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষা রাজধানীর একমাত্র জেলেপল্লীতে।
বুড়িগঙ্গায় অক্সিজেনের মাত্রা কত? বিষাক্ত গ্যাস কোনটা কত আছে? কোথায় কী দূষণ হচ্ছে? নদী নিয়ে দুর্নীতি হাজারো সংবাদ পড়ি এই নদীটাকে নিয়ে। কিন্তু বুড়িগঙ্গার আরো অনেক রূপ আছে। কাশফুল, বক, মাছরাঙ্গা, পাল তোলা নৌকা, জেলে, মাঝি, নদীকে ঘিরে কতোসব উৎসব যে এখনো টিকে আছে তা অজানাই রয়ে গেল! আজ জানাবো নদীর অন্যরূপ। অন্য একদল মানুষের কথা যারা এখনো এই নদীনির্ভর। তাদের জীবন জীবিকা এই নদীকে ঘিরে। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের পাশাপাশি তারা স্বপ্ন দেখে আবারও এই নদীটায় বর্ষায় রুই, কাতলা, বোয়াল, পুঁটি ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে। শীতকালে বাড়া/ঝাপ (গাছের ডাল-পালা দিয়ে নদীতে মাছ ধরার ফাঁদ) থেকে আবারও শিং, মাগুর, কৈ, বাইম ধরা পড়বে। এখনো বর্ষায় এই নদী যাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উৎস। বুড়িগঙ্গার জলেই যাদের ঘর-সংসারের অধিকাংশ কাজ চলে। সেই মানুষদের গল্প দেখতে আর শুনতে বুড়িগঙ্গা রিভার কিপার শরীফ জামিল ভাই নদী দিবসে আয়োজন করেন জেলেদের সাথে আড্ডা। বুড়িগঙ্গার পাড়ে জেলেদের জেলে পেশায় টিকে থাকার গল্প শুনে আপনিও অবাক হবেন। এত দূষিত নদীতে কি মাছ থাকে? এই শহরে এখনো কী করে শত বছরের জেলে পাড়ার লোকগুলো তাদের পেশায় টিকে আছে?
গ্রামের তরুণরা তাদের প্রবীণদের কাছ থেকে এই নদীর অনেক গল্প শুনেছে। কে কত বড় মাছ ধরেছে এই নদী থেকে? জেলেপাড়ার মানিক রাজবংশী গর্বের সাথে বলেন, এক যুগ আগেও মাছে ভরে যেত নৌকা। তিনি জানালেন, বছর কয়েক আগেও এই পল্লীতে অসংখ্য জেলে-জাল-নৌকা ছিল। মানুষগুলোর মাছ ধরা-কেনা-বেচাই ছিল প্রধান পেশা। বেপারিরা অগ্রিম টাকা দিয়ে যেত। ফরিদপুর, পাবনা থেকে লোক আসত এই পল্লীতে রোজ কামলা খাটতে। গেল বছর শেষবারের মতো এসেছিল লোক। এই বছর আসে নদীতে মাছ নেই। তাছাড়া সারা রাত খেটে পাওয়া যায় জন প্রতি পঞ্চাশ থেকে দুইশ টাকা।
এখন ডিপজল, সোয়ারি ঘাট, কাওরান বাজার, নিউমার্কেট থেকে পাইকারি বাজার থেকে মাছ কিনে রায়েরবাজারে বিক্রি করে। অনেকে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় চলে গেছে। যারা গেছে তাদের তালিকায় নিজের পরিবারের লোকও আছে। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। বলতে থাকেন মানিক রাজবংশী।
বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটা। শুধু যে ভিটার টানে থাকি তা নয়। নদীর প্রতি একটা টান পরে গেছে কয়েকবার যেতেও চেয়েছি। মন সায় দেয় না। শান্তি পাই না। কেমন জানি মনে হয় নদীতে আবারও মাছ পড়বে। আমি নৌকা, জাল সব বিক্রি করে দিয়েছি বেপারির দেনা শোধ দিতে। তবে মাছ পড়লেই আবার জাল নিব। মাছ কিনে বিক্রি করে সুখ নাই। মাছ ধরে বিক্রি করাতে আলাদা আনন্দ আছে। এক নিঃশ্বাসে বলে যান আশাবাদী রাজবংশী।
সন্ধ্যায় নদীতে দেখা হলো সুবল রাজবংশীর সাথে। তিনি এখনো প্রতিরাতে মাছ ধরতে যান নদীতে। তার মতো আরো সাতটি নৌকা টিকে আছে এই জেলেপাড়ায়। সন্ধ্যার পর তারা আটজনের দল যান নদীতে। সারা রাত মাছ ধরে সকালে বেপারিরা মাছ বিক্রি করে রায়ের বাজারে। মাছের পরিমাণ এখন খুবই কম তবুও বাপ দাদার পেশাটা আঁকড়ে ধরে আছেন।
সারা বিকেল জেলেদের সাথে আড্ডার পাশাপাশি উপভোগ করলাম বুড়িগঙ্গার অন্য রূপ। বর্ষায় কিন্তু জেলেপাড়াটা পুরো ভিন্ন রূপ ধারণ করে। নদীর তীর ঘেঁষে কাশ ফুল। সারি সারি মাছ ধরার নৌকা, তীরে ছড়ানো মাছ ধরার জাল, স্বচ্ছ পানি- কী নেই এই নদীতে? এই সবই এখনো অল্প পরিসরে হলেও দেখা যাবে বুড়িগঙ্গার তীরের জেলেপাড়াতে। বর্ষার এই স্বচ্ছ জলে শুধু পাওয়া যাবে না মাছ। কিন্তু মাছ ধরাই যাদের চৌদ্দপুরুষের পেশা, নেশা। তাদের জন্য নদীর অর্থ অনেক। নদী তাদের কাছে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, জীবন-জীবিকা, উৎসব আরো কত কী! তাই তো সুবলের কণ্ঠে কলকলিয়ে বেরিয়ে আসে- যতই কাল হোক নদীর জল এই নদীকে ঘৃণা করি কী করে? এখনো তো তার কৃপায় বেঁচে আছি।
সন্ধ্যার পর পর আমরা চলে আসছি মেঠো পথ ধরে, উদ্দেশ্য বছিলার প্রধান সড়ক থেকে গাড়িতে উঠবো। জেলেপাড়ার নারী-পুরুষ, বাচ্চারা গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল। গাড়িতে উঠার আগ মুহূর্তে এক বয়স্ক লোক শরীফ ভাইয়ের হাত চেপে ধরলো। ‘বাপ নদীটারে আগের মতো করে দাও। মরার আগে আমি নদীটারে আগের মতো দেখতে চাই’- নদীর জন্য মানুষটা কাঁদছে। এই জেলের চোখের জল শুধু কি নদীর জন্য? নাকি নদীকেন্দ্রিক তার ভালোবাসা, যে ভালবাসার জন্য সবাই চলে যাওয়ার পরও বৃদ্ধ ভিটে বাড়ি বিক্রি করে যাননি।
বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে জেলে পল্লীর এই পরিবারগুলো সুখ-দুঃখের কথা কখনো কোনো নীতি নির্ধারণী সভা সমাবেশে আলোচিত হবে না। কিন্তু আমরা যারা নদী নিয়ে কথা বলি, পরিকল্পনা করি, নদীকে ভালোবাসি তাদের কাছে অনুরোধ, একবার এই বর্ষার সময় করে ঘুরে আসুন বছিলার জেলে পল্লী থেকে। নদীকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকা এই মানুষগুলোর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন। ভালোবাসতে পারবেন নদীকে, লড়তে পারবেন নদীর জন্য আরো শক্ত করে।
সৈয়দ সাইফুল আলম, পরিবেশকর্মী
shovan1209@yahoo.com
Thursday, 24 October 2013
কোমল পানীয়! নাকি বিষাক্ত পানীয়
হার্ড ড্রিঙ্কস হিসেবে পরিচিত ও নেশাযুক্ত পানীয়ের বিপরীতে কোমল পানীয় সংক্ষেপে সফট্ ড্রিঙ্কস নামেই পরিচিত। ১৭শ শতকে পশ্চিমাবিশ্বে কোমল পানীয়ের প্রথম বাজারজাতকরণ হয়। তখন পানি এবং লেবুর শরবতে মধুর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কোমল পানীয় তৈরি করা হতো। ১৭শ শতকে পশ্চিমাবিশ্বে শুরু হওয়া কোমল পানীয়ের বাজার এখন পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত।
কিন্তু কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি ডলারের কোমল পানীয়ের বাজার বিস্তৃত করতে গিয়ে বোতলে ভরা কোমল পানীয় আর কোমল থাকেনি। কোমল পানীয় ধ্বংস করছে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি, সংস্কৃতি। এক কথায় জনস্বাস্থ্য, প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসে কোমলপানীয় এখন বোতলে ভরা ভয়ানক তরল বোম। তবে কোম্পানিগুলোর মিথ্যা তথ্য আর ভ্রান্ত প্রচারণার মাধ্যমে একটি প্রজন্মের কাছে কোমল পানীয় তার ভয়ঙ্কর রূপটি আড়াল করে বিশুদ্ধ পানীয়ের মানদণ্ডে জাহির করেছে।
কোমল পানীয়তে কীটনাশক: কোমল পানীয়তে যে কীটনাশক আছে কিনা তা নিয়ে কোনো বির্তক নেই এখন আর। কোমল পানীয়ের মধ্যে কীটনাশক মিশানো হয় এই কারণে যাতে, দীর্ঘদিন বোতলে থাকলেও পানিতে কোনো ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, কীট বা পোকা না জন্মাতে পারে। তাছাড়া পানিতে থাকা জুয়োপ্লাঙ্কটন ও ফাইটোপ্লাঙ্কটন বংশ বিস্তার করতে না পারে। ভারতে কোমল পানীয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে কোকাকোলা কোম্পানি স্বীকারও করছে কোকাকোলায় কীটনাশক আছে। কী পরিমান আছে এ প্রশ্নের উত্তরে তারা জানায়, কোমল পানীয়তে কীটনাশকের পরিমাণ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মাত্রায় আছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে উন্নত বিশ্বে যেখানে কঠোরভাবে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেখানে কীটনাশকের মাত্রা এবং ভারত বা আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর মান এক হবে না। কিন্তু কতটা তারত্যম হতে পারে? সিএসই নামক একটি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ কীটনাশকের পরিমাণের যে তথ্য প্রকাশ পায়।
কোক-পেপসির মধ্যে বোতলজাত পানির কীটনাশকের ২৫-৩০ গুণ বেশিমাত্রায় কীটনাশক শনাক্ত হয়। সিএসই বোতলজাত পানির মধ্যে অনুমোদিত কীটনাশকের মাত্রাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে পরীক্ষা করে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভাইরনমেন্ট (সিএসই) তাদের পরীক্ষায় কোকাকোলা ও পেপসিতে লিন্ডেন, ডিডিট, ম্যালাথিয়ন এবং ক্লোরাপাইরিফস্রে মতো ক্ষতিকারক কীটনাশক পায়। মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতির কারণে এই কীটনাশগুলো অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু কোকাকোলা, পেপসি তাদের পানীয়তে নিষিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করে।
উন্নত বিশ্বে যেখানে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে মানা হয় সেখানে যে পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তা আমাদের মতো দেশগুলোতে কোম্পানিগুলো কখনই তা মানে না। তার প্রমাণ ভারতে পরীক্ষার ফলাফলে সুষ্পষ্ট। আমাদের দেশে কোমল পানীয়ের বোতলের গায়ে নানা উপাদনের কথা লেখা থাকলেও লেখা নেই কি পরিমাণ কীটনাশক আছে বা স্বাস্থ্যসম্মত কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ এর ৬ ক তে বলা আছে, বিষাক্ত বা বিপজ্জনক কেমিকেল, মাদকীয় খাদ্য রং প্রভৃতির বিক্রয় বা ব্যবহার নিষিদ্ধকরণঃ কোনো ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এবং স্বয়ং তাহার প্রতিনিধি মাধ্যমে- ক) ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, কীটনাশক (ডিডিটি, পিসিবি তৈল ইত্যাদি) ধরনের কোনো বিষাক্ত বা বিপজ্জনক কেমিকেল বা উপাদান বা দ্রব্য বা কোনো মাদকীয় খাদ্য, রং বা সুগন্ধী দ্রব্য খাদ্যে ব্যবহার করিতে পারিবে না, যাহা মানবদেহের ক্ষতি করিতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত কোমলপানীয়তে কি পরিমান কীটনাশক আছে তার সুষ্ঠু বর্ণনা কোনো কোমল পানীয়ের মোড়কেই লেখা নেই।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: শুধু কীটনাশক নয়, কোলা ধরনের পানীয়তে কোকো, ক্যাফিন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে। শরীরে কার্বণ ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেশি হলে এবং অক্সিজেনের তারতম্য হলে মারাতত্মক ক্ষতি হতে পারে। কোনো কোমল পানীয়তেই পুষ্টিকর কিছু থাকে না, এর মধ্যে অধিকাংশ (৮০%) পানি, চিনি এবং স্বাদ বৃদ্ধিকর পদার্থ থাকে। ঢেকুর ওঠার আনন্দে অনেকেই কোমল পানীয় খায় কিন্তু এটি ক্ষতিকর। যে রংগুলো ব্যবহার করা হয় তা ক্যান্সারের সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয় বহুলাংশে। বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য জার্নাল ল্যানসেটের তথ্য অনুযায়ী কোকাকোলা অবিসিটি (মুটিয়ে যাওয়া) এবং ডায়াবেটিস বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, কোকাকোলার মধ্যে জেনেটিক্যারি মডিফাইড উপাদান রয়েছে বলে এথিক্যাল কনজুমার (২০০০) দাবি করেছে।
কোমল পানীয় হলো স্বাস্থ্যহানীর বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক উপকরণ ও উপাদানের সমারোহ। কোমল পানীয় সংরক্ষণের জন্য কার্বনিক এসিড, ব্যানজুইক এসিড ব্যবহার করা হয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনস্ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড প্রিভেনশন/নিউট্রিশন, ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড মেটাবলিজম ২০১৩ সাইন্টিফিক সেশনে পেশ করা স্টাডি রিপোর্টে দেখা যায়, সিন্থেটিক কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ কয়েক রকম ক্যান্সার। এই স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী নিয়মিত কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসে মারা গিয়েছেন এক লাখ ৩৩ হাজার মানুষ, হৃদরোগে মারা গিয়েছেন ৪৪ হাজার এবং ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন প্রায় ছয় হাজার।
পৃথিবীর ১৫টি জনবহুল দেশের মধ্যে মেক্সিকোতে অত্যধিক পরিমাণে কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি। প্রতি লাখে প্রায় ৩২ জন মানুষ প্রতি বছর মারা যান অত্যাধিক কোমল পানীয় পানের জন্যে।
দেশে দেশে কোমল পানীয় বিরুদ্ধে আন্দোলন: কোমল পানীয় বন্ধ, নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন, কোথাও বা আন্দোলন চলছে কোমল পানীয়তে কী কী উপাদান আছে তা প্রকাশের জন্য। দুনিয়াব্যাপী শিশুদের কোমলপানীয় থেকে রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। এরই ফলশ্রুতিতে দেশে দেশে সরকারিভাবেও কোক-পেপসিসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রিয় নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৯২০ সালে আমেরিকা জুড়ে প্রবল সমালোচনা মুখে কোকাকোলা কোম্পানি তার বোতলের গায়ে লিখতে শুরু করে যে তারা কোকা পাতার নির্যাস থেকে কোকেন বাদ দিয়ে সেই নির্যাস ব্যবহার করছে। তাতে প্রমাণ হয় ১৯২০ সালের আগে তারা কোকেনযুক্ত নির্যাস ব্যবহার করত। দুনিয়াতে এত পানীয় থাকতে তারা কেন কোকেন পাতার নির্যাস পানীয়তে মিশায় তার উত্তর খুবই সহজ। সিএসই ১১টি কোকাকোলা ও পেপসিকোলা ব্রান্ড নিয়ে ২০০৩ সালেও গবেষণা করেছিল। ১২টি রাজ্যে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে এর মধ্যে কীটনাশকের পরিমাণ অনেক বেশি। আগস্ট ৪ তারিখে এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে ভারতের সংসদে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জাতীয় সংসদের সাংসদরা দাবি জানান যে কোকাকোলা ও পেপসিকোলা বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। ৯ আগস্ট ২০০৬ সালে কেরালা রাজ্য সরকার উচ্চমাত্রার কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে কোকাকোলা-পেপসি নিষিদ্ধ করে।
ভারতে সিএসই- এর গবেষণার ফলাফলের প্রক্ষিতে দাবি জানানো হয়েছে যে সরকার কোমল পানির নিরাপদ মাত্রায় উপাদান ব্যবহারের নিয়মনীতি প্রণয়ণ করুক। সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন, এই মর্মে মামলা করে যে কোকাকোলা ও পেপসিকোলা কোম্পানিদ্বয় জনসমক্ষে জানাক তাদের পানীয়তে ক্ষতিকর পদার্থ কতটুকু আছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর মুম্বাইয়ের স্কুলগুলোতে কোমল পানীয় ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মধ্য প্রদেশ সরকার, গুজরাট, কেরালা ও পাঞ্জাবে সরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোকাকোলা ও পেপসি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। জনগণের আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ১৫ সদ্যসের সংসদীয় কমিটি করতে। কমিটি তদন্তে নানা প্রতারণার সত্যতা পায়। পালামেন্ট ক্যাফেটেরিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সকল ক্লাবে কোকাকোলা-পেপসির বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
যুদ্ধের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে কোমল পানীয় নাম জাড়িয়ে থাকায় দেশে দেশে সচেতন মানুষ কোক-পেপসি বর্জনের ডাক উঠেছে বহুবার। কিন্তু তারপরও কোমল পানীয় বিভিন্ন অপতৎপরতার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করে চলছে। অর্থনীতির দোহাই দিয়ে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করছে জনস্বাস্থ্য।
মিথ্যা ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন: দুনিয়াব্যাপী বহুজার্তিক কোম্পানিগুলো মুনাফাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নীতি নৈতিকাকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না। নামকরা কোমল পানীয় কোনিনীগুলো অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারে র্শীষে। আমাদের মতো দেশগুলোতে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো অসত্য, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তাদের পণ্যের প্রচার করছে। এক্ষেত্রে কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো অপ্রতিরোধ্য। মনোলোভা বিজ্ঞাপন দিয়ে কোমল পানীয়ের নামে বিষ তুলে দেয়া হচ্ছে শিশুদের। বিজ্ঞাপনের চমৎকারিত্বের আড়ালে মানুষকে প্রতারিত করে অবাধে ক্ষতিকর কোমল পানীয় বেচা-কেনা চলছে। শিশুদের স্কুলের গেইট, এমনকি পুলিশের থানার গেইটে কোমল পানীয়ের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।
বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ মিথ্যা প্রচারণার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে ১৯ ধারার (১) এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি এমন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করিবেন না, তাহা কোনো খাদ্যবস্তুকে মিথ্যাভাবে বর্ণনা করে বা এর প্রকৃতি, বস্তু বা মান সর্ম্পকে ভিন্নরূপ ধরাণা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারায় বলা আছে, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিবার দণ্ড। -কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিলে তিনি অনুর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনাধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ভারতে হিমাচল প্রদেশের মানালী-রোহতাং হাইওয়ের দুপাশের পর্বতে পাথড়ে গায়ে রং দিয়ে কোকাকোলা ও পেপসি তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়। সুপ্রিম কোর্ট ২০০২ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রত্যেক কোম্পানিকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। ভারতে সংসদীয় কমিটি তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, কোকাকোলা-পেপসি তাদের ভ্রান্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। শিশুদের আকৃষ্ট করেই কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন তৈরি করে। আর কয়েক যুগ ধরে ভ্রান্ত তথ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে একটি প্রজন্মের কাছে কোমল পানীয় মানে স্বাস্থ্যকর, বিশুদ্ধ পানীয় বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপনের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মুনাফালোভী, ক্ষতিকরণ কোমল পানীয় তাদের অনৈতিক, ভ্রান্ত তথ্য নির্ভর বিজ্ঞাপন প্রচারে মাধ্যমে মানুষদের আকৃষ্ট করেই যাচ্ছে। এক বাক্যে বলা যায়, কোমল পানীয় ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয় বিলাসী পানীয়। কেবলমাত্র জনমত তৈরি করেই এর ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। সচেনতার পাশাপাশি এই ক্ষতিকারক পানীয়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট আইন। সরকারি ও সামাজিকভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলে বহুলাংশে কোমল পানীয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
যেমন: কোমল পানীয় বোতল এবং মোড়কে স্বাস্থ্য সর্তকবাণী লিখতে হবে। কোমল পানীয়তে কি পরিমাণ কীটনাশক থাকে তা উল্লেখ্য করতে হবে। শিশুদের বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন এবং চারপাশের একটি নিদিষ্ট সীমানায় কোমল পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। কোমল পানীয় প্রতি ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়াতে হবে। র্সবপরি কোমল পানীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ সকল প্রকার প্রচার মাধ্যমে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র অর্থনীতির দোহাই দিয়ে বিষাক্ত কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে সরকারের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে আমরা ব্যবসা চাই কিন্তু জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি, সংস্কৃতি বিকিয়ে দিয়ে ব্যবসার করার অধিকার রাষ্ট্রেকে কেউ দেয়নি। তাই জনস্বার্থে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
কিন্তু কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি ডলারের কোমল পানীয়ের বাজার বিস্তৃত করতে গিয়ে বোতলে ভরা কোমল পানীয় আর কোমল থাকেনি। কোমল পানীয় ধ্বংস করছে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি, সংস্কৃতি। এক কথায় জনস্বাস্থ্য, প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসে কোমলপানীয় এখন বোতলে ভরা ভয়ানক তরল বোম। তবে কোম্পানিগুলোর মিথ্যা তথ্য আর ভ্রান্ত প্রচারণার মাধ্যমে একটি প্রজন্মের কাছে কোমল পানীয় তার ভয়ঙ্কর রূপটি আড়াল করে বিশুদ্ধ পানীয়ের মানদণ্ডে জাহির করেছে।
কোমল পানীয়তে কীটনাশক: কোমল পানীয়তে যে কীটনাশক আছে কিনা তা নিয়ে কোনো বির্তক নেই এখন আর। কোমল পানীয়ের মধ্যে কীটনাশক মিশানো হয় এই কারণে যাতে, দীর্ঘদিন বোতলে থাকলেও পানিতে কোনো ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, কীট বা পোকা না জন্মাতে পারে। তাছাড়া পানিতে থাকা জুয়োপ্লাঙ্কটন ও ফাইটোপ্লাঙ্কটন বংশ বিস্তার করতে না পারে। ভারতে কোমল পানীয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে কোকাকোলা কোম্পানি স্বীকারও করছে কোকাকোলায় কীটনাশক আছে। কী পরিমান আছে এ প্রশ্নের উত্তরে তারা জানায়, কোমল পানীয়তে কীটনাশকের পরিমাণ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মাত্রায় আছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে উন্নত বিশ্বে যেখানে কঠোরভাবে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেখানে কীটনাশকের মাত্রা এবং ভারত বা আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর মান এক হবে না। কিন্তু কতটা তারত্যম হতে পারে? সিএসই নামক একটি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ কীটনাশকের পরিমাণের যে তথ্য প্রকাশ পায়।
কোক-পেপসির মধ্যে বোতলজাত পানির কীটনাশকের ২৫-৩০ গুণ বেশিমাত্রায় কীটনাশক শনাক্ত হয়। সিএসই বোতলজাত পানির মধ্যে অনুমোদিত কীটনাশকের মাত্রাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে পরীক্ষা করে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভাইরনমেন্ট (সিএসই) তাদের পরীক্ষায় কোকাকোলা ও পেপসিতে লিন্ডেন, ডিডিট, ম্যালাথিয়ন এবং ক্লোরাপাইরিফস্রে মতো ক্ষতিকারক কীটনাশক পায়। মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতির কারণে এই কীটনাশগুলো অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু কোকাকোলা, পেপসি তাদের পানীয়তে নিষিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করে।
উন্নত বিশ্বে যেখানে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে মানা হয় সেখানে যে পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তা আমাদের মতো দেশগুলোতে কোম্পানিগুলো কখনই তা মানে না। তার প্রমাণ ভারতে পরীক্ষার ফলাফলে সুষ্পষ্ট। আমাদের দেশে কোমল পানীয়ের বোতলের গায়ে নানা উপাদনের কথা লেখা থাকলেও লেখা নেই কি পরিমাণ কীটনাশক আছে বা স্বাস্থ্যসম্মত কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ এর ৬ ক তে বলা আছে, বিষাক্ত বা বিপজ্জনক কেমিকেল, মাদকীয় খাদ্য রং প্রভৃতির বিক্রয় বা ব্যবহার নিষিদ্ধকরণঃ কোনো ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এবং স্বয়ং তাহার প্রতিনিধি মাধ্যমে- ক) ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, কীটনাশক (ডিডিটি, পিসিবি তৈল ইত্যাদি) ধরনের কোনো বিষাক্ত বা বিপজ্জনক কেমিকেল বা উপাদান বা দ্রব্য বা কোনো মাদকীয় খাদ্য, রং বা সুগন্ধী দ্রব্য খাদ্যে ব্যবহার করিতে পারিবে না, যাহা মানবদেহের ক্ষতি করিতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত কোমলপানীয়তে কি পরিমান কীটনাশক আছে তার সুষ্ঠু বর্ণনা কোনো কোমল পানীয়ের মোড়কেই লেখা নেই।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: শুধু কীটনাশক নয়, কোলা ধরনের পানীয়তে কোকো, ক্যাফিন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে। শরীরে কার্বণ ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেশি হলে এবং অক্সিজেনের তারতম্য হলে মারাতত্মক ক্ষতি হতে পারে। কোনো কোমল পানীয়তেই পুষ্টিকর কিছু থাকে না, এর মধ্যে অধিকাংশ (৮০%) পানি, চিনি এবং স্বাদ বৃদ্ধিকর পদার্থ থাকে। ঢেকুর ওঠার আনন্দে অনেকেই কোমল পানীয় খায় কিন্তু এটি ক্ষতিকর। যে রংগুলো ব্যবহার করা হয় তা ক্যান্সারের সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয় বহুলাংশে। বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য জার্নাল ল্যানসেটের তথ্য অনুযায়ী কোকাকোলা অবিসিটি (মুটিয়ে যাওয়া) এবং ডায়াবেটিস বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, কোকাকোলার মধ্যে জেনেটিক্যারি মডিফাইড উপাদান রয়েছে বলে এথিক্যাল কনজুমার (২০০০) দাবি করেছে।
কোমল পানীয় হলো স্বাস্থ্যহানীর বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক উপকরণ ও উপাদানের সমারোহ। কোমল পানীয় সংরক্ষণের জন্য কার্বনিক এসিড, ব্যানজুইক এসিড ব্যবহার করা হয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনস্ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড প্রিভেনশন/নিউট্রিশন, ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড মেটাবলিজম ২০১৩ সাইন্টিফিক সেশনে পেশ করা স্টাডি রিপোর্টে দেখা যায়, সিন্থেটিক কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ কয়েক রকম ক্যান্সার। এই স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী নিয়মিত কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসে মারা গিয়েছেন এক লাখ ৩৩ হাজার মানুষ, হৃদরোগে মারা গিয়েছেন ৪৪ হাজার এবং ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন প্রায় ছয় হাজার।
পৃথিবীর ১৫টি জনবহুল দেশের মধ্যে মেক্সিকোতে অত্যধিক পরিমাণে কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি। প্রতি লাখে প্রায় ৩২ জন মানুষ প্রতি বছর মারা যান অত্যাধিক কোমল পানীয় পানের জন্যে।
দেশে দেশে কোমল পানীয় বিরুদ্ধে আন্দোলন: কোমল পানীয় বন্ধ, নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন, কোথাও বা আন্দোলন চলছে কোমল পানীয়তে কী কী উপাদান আছে তা প্রকাশের জন্য। দুনিয়াব্যাপী শিশুদের কোমলপানীয় থেকে রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। এরই ফলশ্রুতিতে দেশে দেশে সরকারিভাবেও কোক-পেপসিসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রিয় নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৯২০ সালে আমেরিকা জুড়ে প্রবল সমালোচনা মুখে কোকাকোলা কোম্পানি তার বোতলের গায়ে লিখতে শুরু করে যে তারা কোকা পাতার নির্যাস থেকে কোকেন বাদ দিয়ে সেই নির্যাস ব্যবহার করছে। তাতে প্রমাণ হয় ১৯২০ সালের আগে তারা কোকেনযুক্ত নির্যাস ব্যবহার করত। দুনিয়াতে এত পানীয় থাকতে তারা কেন কোকেন পাতার নির্যাস পানীয়তে মিশায় তার উত্তর খুবই সহজ। সিএসই ১১টি কোকাকোলা ও পেপসিকোলা ব্রান্ড নিয়ে ২০০৩ সালেও গবেষণা করেছিল। ১২টি রাজ্যে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে এর মধ্যে কীটনাশকের পরিমাণ অনেক বেশি। আগস্ট ৪ তারিখে এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে ভারতের সংসদে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জাতীয় সংসদের সাংসদরা দাবি জানান যে কোকাকোলা ও পেপসিকোলা বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। ৯ আগস্ট ২০০৬ সালে কেরালা রাজ্য সরকার উচ্চমাত্রার কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে কোকাকোলা-পেপসি নিষিদ্ধ করে।
ভারতে সিএসই- এর গবেষণার ফলাফলের প্রক্ষিতে দাবি জানানো হয়েছে যে সরকার কোমল পানির নিরাপদ মাত্রায় উপাদান ব্যবহারের নিয়মনীতি প্রণয়ণ করুক। সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন, এই মর্মে মামলা করে যে কোকাকোলা ও পেপসিকোলা কোম্পানিদ্বয় জনসমক্ষে জানাক তাদের পানীয়তে ক্ষতিকর পদার্থ কতটুকু আছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর মুম্বাইয়ের স্কুলগুলোতে কোমল পানীয় ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মধ্য প্রদেশ সরকার, গুজরাট, কেরালা ও পাঞ্জাবে সরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোকাকোলা ও পেপসি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। জনগণের আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ১৫ সদ্যসের সংসদীয় কমিটি করতে। কমিটি তদন্তে নানা প্রতারণার সত্যতা পায়। পালামেন্ট ক্যাফেটেরিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সকল ক্লাবে কোকাকোলা-পেপসির বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
যুদ্ধের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে কোমল পানীয় নাম জাড়িয়ে থাকায় দেশে দেশে সচেতন মানুষ কোক-পেপসি বর্জনের ডাক উঠেছে বহুবার। কিন্তু তারপরও কোমল পানীয় বিভিন্ন অপতৎপরতার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করে চলছে। অর্থনীতির দোহাই দিয়ে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করছে জনস্বাস্থ্য।
মিথ্যা ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন: দুনিয়াব্যাপী বহুজার্তিক কোম্পানিগুলো মুনাফাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নীতি নৈতিকাকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না। নামকরা কোমল পানীয় কোনিনীগুলো অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারে র্শীষে। আমাদের মতো দেশগুলোতে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো অসত্য, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তাদের পণ্যের প্রচার করছে। এক্ষেত্রে কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো অপ্রতিরোধ্য। মনোলোভা বিজ্ঞাপন দিয়ে কোমল পানীয়ের নামে বিষ তুলে দেয়া হচ্ছে শিশুদের। বিজ্ঞাপনের চমৎকারিত্বের আড়ালে মানুষকে প্রতারিত করে অবাধে ক্ষতিকর কোমল পানীয় বেচা-কেনা চলছে। শিশুদের স্কুলের গেইট, এমনকি পুলিশের থানার গেইটে কোমল পানীয়ের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।
বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ মিথ্যা প্রচারণার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে ১৯ ধারার (১) এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি এমন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করিবেন না, তাহা কোনো খাদ্যবস্তুকে মিথ্যাভাবে বর্ণনা করে বা এর প্রকৃতি, বস্তু বা মান সর্ম্পকে ভিন্নরূপ ধরাণা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারায় বলা আছে, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিবার দণ্ড। -কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিলে তিনি অনুর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনাধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ভারতে হিমাচল প্রদেশের মানালী-রোহতাং হাইওয়ের দুপাশের পর্বতে পাথড়ে গায়ে রং দিয়ে কোকাকোলা ও পেপসি তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়। সুপ্রিম কোর্ট ২০০২ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রত্যেক কোম্পানিকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। ভারতে সংসদীয় কমিটি তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, কোকাকোলা-পেপসি তাদের ভ্রান্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। শিশুদের আকৃষ্ট করেই কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন তৈরি করে। আর কয়েক যুগ ধরে ভ্রান্ত তথ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোমল পানীয় কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে একটি প্রজন্মের কাছে কোমল পানীয় মানে স্বাস্থ্যকর, বিশুদ্ধ পানীয় বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপনের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মুনাফালোভী, ক্ষতিকরণ কোমল পানীয় তাদের অনৈতিক, ভ্রান্ত তথ্য নির্ভর বিজ্ঞাপন প্রচারে মাধ্যমে মানুষদের আকৃষ্ট করেই যাচ্ছে। এক বাক্যে বলা যায়, কোমল পানীয় ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয় বিলাসী পানীয়। কেবলমাত্র জনমত তৈরি করেই এর ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। সচেনতার পাশাপাশি এই ক্ষতিকারক পানীয়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট আইন। সরকারি ও সামাজিকভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলে বহুলাংশে কোমল পানীয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
যেমন: কোমল পানীয় বোতল এবং মোড়কে স্বাস্থ্য সর্তকবাণী লিখতে হবে। কোমল পানীয়তে কি পরিমাণ কীটনাশক থাকে তা উল্লেখ্য করতে হবে। শিশুদের বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন এবং চারপাশের একটি নিদিষ্ট সীমানায় কোমল পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। কোমল পানীয় প্রতি ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়াতে হবে। র্সবপরি কোমল পানীয় নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ সকল প্রকার প্রচার মাধ্যমে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র অর্থনীতির দোহাই দিয়ে বিষাক্ত কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে সরকারের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে আমরা ব্যবসা চাই কিন্তু জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি, সংস্কৃতি বিকিয়ে দিয়ে ব্যবসার করার অধিকার রাষ্ট্রেকে কেউ দেয়নি। তাই জনস্বার্থে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
Sunday, 20 January 2013
Publication ceremony of “Tobacco control in Bangladesh”
Tobacco use is cause of serious diseases and death, so that it needs
to be controlled strongly to save people from tobacco related death. It
is constitutional responsibility to the government and policy makers to
amendment the tobacco control law as the draft is approved by cabinet
division recently in a meeting presided by the Prime Minister. The
amendment should be pass in the next parliament session.
Speakers made the statement at meeting on publication ceremony of
“Tobacco control in Bangladesh” Bengali version at afternoon, 18 January
at Work for a Better Bangladesh (WBB) Trust office in Dhaka.
In this publication ceremony, Mr. Abu Naser Khan, eminant
environmentalist and Chairman of Poribesh Bachao Andolon-POBA (Save the
Environment Movement), Helal Ahmed, General Secretary of Pratysha Anti
Drug Organization, Advocate Syed Mahbubul Alam, Director of WBB Trust
and Shagufta Sultana, Program Coordinator, National Anti TB Association
of Bangladesh (NATAB) spoke. Event was moderated by Aminul Islam Sujon,
Project Coordinator of WBB Trust.
Environmentalist and Chairman of Save the Environment Movement (POBA)
Abu Naser Khan said food security threatened for the dangerous tobacco
farming in the arable land. Farmers will be encouraged to cultivate food
grains if marketing of agro products is developed. He added that
tobacco control is not only govt.’s duty it requires concerted efforts.
In this event, Mr. Saifuddin Ahmed; Coordinator of Bangladesh Anti
Tobacco Alliance (BATA), Ibnul Sayed Rana; Chairman of Nirapad
Development Foundation, Md. Amir Hasan; Chairman of Green Mind Society,
Md. Hasinur Rahman; Executive Director of BOUKAS, Md. Mahbul Haq;
Executive Director of BCHRD, Murad Bhuyan; Executive Director of SARDA,
Md. Nazmul Haider; Program Officer of YPSA, H M Mamun; Program Officer
of ACLAB, Dilara Mahrab and Isaba Farheen from EC Bangladesh, Syeda
Anonna Rahman; National Advocacy Officer of WBB Trust were present.
Subscribe to:
Posts (Atom)