Saturday, 14 June 2014

নষ্ট লাশ দেখবালের নষ্ট মানুষগুলো, কোনদিন ধন্যবাদ পেতে পারে না।


গত ২৬ বছর যাবৎ চাকুরী করি ঢাকা মেডিক্যালে । যে লাশ কেউ ধরে না, সেই লাশ আমি ধরি। কোন লাশের হাত থাকে না, মাথা থাকে না।
কোন লাশের তো আবার মা বাপ-ই নাই ।

যে মানুষটা থাকে পরিবারের সব, সেই মানুষের লাশটাও পরিবারের লোকজন ধরতে আসে না। আমরা সেই লাশগুলোকে গোছল দেই। সুগন্ধি মাখি।

আমাদের কোনদিন ধন্যবাদ!
কেউ আসে না এখানে।
ফুল তো দূরের কথা।

আপনারও যে আমাদের কাছে আসবেন না। তাও জানি।
আমরা মানুষ না। আমরা একদল অমানুষ এখানে থাকি | লাশ কাটি, গোছল দেই। আমাদের নিয়ে হাজারো মিথ্যে গল্প মানুষের মুখে মুখে। কেউ যখন আসে তখন এমন ভাব | এ যেন এক নিষিদ্ধ পল্লী। কিন্তু আপনার প্রিয়জন, যার দেহ পচে গেছে তাকে কি আপনি ধরবেন? না ধরবেন না।

আমি তো তার কেউ না। তারপরও আমিই তার দেহ সাজিয়ে দেই। এই নষ্ট লাশ দেখভালের নষ্ট মানুষগুলো কোন ধন্যবাদ পেতে পারে না?

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উচুঁ নিচু ভেদাভেদ বাদ দিয়ে। সকল কর্মচারীদের ধন্যবাদ দিতে গিয়েছিলাম আজ আমরা। আসার পথে একজন জিজ্ঞাসা করল কি হচ্ছে এখানে? বললাম সারাজীবন তো মানুষের সেবা দিয়েছেন। আমরা সেবা নিয়েছি। কখনো বলিনি ”ধন্যবাদ আপনাদের, আমাদের সেবা দেওয়ার জন্য “।

নিচু সুরে তিনি জিজ্ঞাস করলেন
কি গিয়েছেন নাকি মর্গের দিকে? আমাদের একটা ফুল দিতে?

আমাদের প্রোগ্রাম শেষ। আমরা সারাদিন মেডিক্যালে কলেজের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটেছি ।যাকে পেয়েছি তাকেই ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু সত্যি যাওয়া হয়নি, সেই লাশ কাটা ঘরের মানুষগুলোর কাছে।

আমার সীমাবদ্ধতা, অজ্ঞতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী আগামীতে আপনার কাছেই আমরা যাব সবার আগে। আপনাকে দিয়ে শুরু করব ”ধন্যবাদ আপনাদের, আমাদের সেবা দেওয়ার জন্য”।

আমি এবং আমরা ক্ষমা প্রার্থী।