Tuesday 20 April 2010

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুফল পেতে আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন

গনমাধ্যমের সাথে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র মতবিনিময় সভায় বক্তারা
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুফল পেতে আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন

ধূমপান ও তামাকজাতদ্যব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আইনটি প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। তাই আইনটির সুফল পুরোপুরি পেতে এই আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন। আজ সকাল ১১.০০টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন বক্তারা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যায়যায়দিন এর রেজাউল করিম, ইত্তেফাকের মুন্না রায়হান, ভেরের কাগজের কবির হোসেন, দৈনিক সংগ্রামের সাদেকুর রহমান, দৈনিক ডেসটিনির সুলতানা কণা, বাংলাদেশ সময় এর সঞ্জয় কুন্ড, আমাদের সময় এর শফিকুল ইসলাম জুয়েল, দৈনিক সংবাদ এর নিখিল ভদ্র, দৈনিক সংবাদপত্রের প্রশান্ত মজুমদার, দৈনিক ভোরের ডাক এর সিরাজুজ্জামান, দৈনিক খবরপত্র এর ওবায়দুর রহমান শাহীন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুবুল আলম ।

সভায় বক্তারা বলেন, আইনটির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানিগুলো আইনকে পাশ কাটানোর নিত্য নতুন কৌশল আবিস্কার করছে। কোম্পানীর এ সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি আইনকে জনকল্যাণমূখী করে বাস্তবায়নে জনসাধারনের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, এফসিটিসি বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিষয়ক চুক্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ চুক্তি গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক এ চুক্তি স্বাক্ষর ও র‌্যাটিফাই করেছে। তাই এফসিটিসি’র আলোকে আইন উন্নয়নের বাদ্যবাধকতা রয়েছে। এফসিটিসি অনুসারে বিজ্ঞাপন বন্ধ, চোরাচালান রোধ, মোড়কের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ককারণবানী, কর বৃদ্ধি, শুল্কমুক্ত বিক্রি বন্ধকরণ, অধূমপায়ীর অধিকার সংরক্ষন ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য দিয়ে আইনের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে হবে।

তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্য বলতে তামাক হতে তৈরী যে সকল দ্রব্য ধূমপানে মাধ্যমে শ্বাসের সাথে টেনে নেয়া যায় অর্থাৎ বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রণ (মিক্সার) ও ইহার অন্তর্ভুক্ত হবে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাদা পাতা, জর্দ্দা, গুল, খৈনী ইত্যাদি তামাকজাতদ্রব্য ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই এ সকল দ্রব্যসহ অন্যান্য তামাকজাতদ্রুব্য গুলো আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আইনে পাবলিক প্লেসের আওতায় রেষ্টুরেন্ট এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে আনা হয়নি। এসকল স্থানকে ধূমপানমুক্ত স্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এবং পাবলিক পে¬স ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত না করার প্রেক্ষিতে মালিক, ম্যানেজার, তত্ত্বাবধায়ক ব্যক্তিকে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান করতে হবে।

তারা আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে অবৈধ বিজ্ঞাপনের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে যা তামাক কোম্পানীর জন্য খুবই সামান্য। এই জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তামাক কোম্পানির নাম, রং, লোগো দ্বারা উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারতে হবে।

বর্তমানে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ৩০% শতাংশ জায়গাজুড়ে সতর্কবাণী পদর্শিত হলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ নিরক্ষর লোকের দ্বারা তা পড়া সম্ভব নয়। তাছাড়া একটি ছবি কয়েক হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী তাই অনেক উন্নত দেশের মত আমাদের দেশেও প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদর্শনের বিধান করতে হবে। পশাপাশি স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থা ও কোম্পানি কর্তৃক আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া আইন উন্নয়নে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির ও সিগারেটের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের সু স্পষ্ট বিধান এবং সকল নাগরিককে আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে মামলার করার অধিকার আইনে অর্ন্তভুক্তির দাবী জানান বক্তারা।

No comments:

Post a Comment