Tuesday 20 April 2010
শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন
শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান
শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, আজ ২৭ এপ্রিল ২০০৮ পবা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বক্তারা বলেন, শেভরনের ভূতাত্ত্বিক জরিপের কারণে প্রচন্ড শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে, শেভরন কোম্পানির লোকেরা ভারী যন্ত্রপাতি ও যানবাহন নিয়ে প্রবেশ এবং বনাঞ্চলের প্রায় ১০০/১৫০ জন লোক প্রবেশ করার প্রেক্ষিতে বনের নিরবতা বা বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, সংরক্ষিত বনের ভিতর জরিপকার্যে নিয়োজিত লোকবল অবাধে ধূমপান করছে।
গত ২৬ এপ্রিল ২০০৮ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র একটি প্রতিনিধিদল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিদর্শনে উদ্যানে এই অবস্থা লক্ষ্য করেন। এর প্রেক্ষিকেই পবা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলে আশেপাশের এলাকার কাচা-পাকা বাড়ীতে ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র কম্পনের ফলে অনেক বন্য প্রাণী বন ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লাউয়াছড়া বনে শুধু শেভরন নয়, গ্রামীণ ফোনও কোম্পানির অপটিক্যাল ফাইভার স্থাপনের জন্য খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন সংরক্ষন বিভাগের কর্মকর্তাদের এই কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্মকর্তাগণ গ্রামীণ ফোনের এ কার্যক্রম সম্পর্কে জানে না বলে পরির্দশন দলের প্রতিনিধিদের জানায়। রেল লাইনের ধারে গর্ত করে এধরনের কার্যক্রম রেল চলাচলের জন্য হুমকি বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা বলেন তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ বস্তকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আমাদের বনকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বনকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা না করার কারণেই বনকে অবাধে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু বন আমাদের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। সরকার বন রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একদিকে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে। অপরদিকে এই ধরনের কোম্পানি ও দেশী কিছু স্বার্থানেষী কর্মকর্তা বা ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরামর্শ ও সহযোগিতার কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে। বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞদের মতে বন্য প্রানীরা তাদের বসবাসের জন্য অধিকতর নির্জন স্থানকেই বেছে নিয়ে থাকে। শেভরন কোম্পানীর এই জরিপের ফলে বনের সেই নির্জনতা ও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়েছে। ফলে সংরক্ষিত বনে বসবাসকারী সকল প্রানীর আবাসন বিন্যাস ও জীববৈচিত্র হয়েছে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ এধরনের ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা ও পরামর্শ, তেল কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নামে তেল অনুসন্ধানে বা উত্তোলনের কাজ চালায়। তেল উত্তোলন ও অনুসন্ধানের নামে ধ্বংস করে পরিবেশ, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। ১৯৯৭ সালে ১৪জুন মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের গ্যাসকূপে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পরে বনের ভিতর দিয়ে ইউনোকল গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর ফলে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।
বক্তারা বলেন বিদেশী কোম্পানিগুলো কি আইনের উর্দ্ধে? দেশের পরিবেশবাদীদের অবজ্ঞা করে বিভিন্ন কোম্পানিকে কার্যক্রমের নামে পরিবেশ ধ্বংশের অনুমোদনের উদাহরণ এই প্রথম নয়। আইনকে ভঙ্গ করে এধরনের অনুমোদন কারা প্রদান করে? কি তাদের লাভ? এদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বক্তারা বলেন আমাদের দেশে কাজ করতে হলে অবশ্যই দেশের সকল আইন ও প্রতিষ্ঠানকে মান্য করে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের আইন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবজ্ঞা দেশের সংবিধান, সরকার ও জনসাধারণের প্রতি অবজ্ঞাও। একটি স্বাধীন সার্বভোম দেশে বিদেশী কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতামূলক কার্যকলাপ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
বক্তারা লাউয়াছড়া সংরক্ষিত উদ্যানে শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপ নিষিদ্ধ, জরিপের কারণে ক্ষতিপুরণ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ, বিগত দিনে ও বর্তমানে দেশের বন ধ্বংশ করে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমোদনকারী ও সমর্থনকারী কর্মকর্তাদের আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তি প্রদান, ভবিষ্যতে সংরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা অনুমোদন না করা, আগামীতে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দেশের ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইনসহ সকল আইন মেনে অনুমোদন দেয়া, অনুসন্ধানকারী কোম্পানির কাছ থেকে বন্ডমানি নেয়া, বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্য করা, সংরক্ষিত স্থানে সরকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে অগ্রধিকার দেওয়া, যে কোন দূর্ঘটনার দায় কী হবে তা সুস্পষ্টভাবে অনুসন্ধানের চুক্তিতে উলে¬খ্য করা, চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং জনগণের মতামত নেয়ার দাবি করেন। বক্তারা বন রক্ষায় সরকার, গণমাধ্যমকর্মী, রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী, শ্রমিকসহ প্রতিটি স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, তেল গ্যাস ও বন্দর ও বিদ্যু রক্ষা কমিটির ইঞ্জিঃ মোঃ শহিদুল্লাহ এবং ব্যারিষ্টার রায়হান খালিদ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment