দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে আমদানীকৃত গুড়ো দুধে মেলামিন এর অস্তিত্ব সনাক্ত হওয়া, সনাক্ত হওয়ার পরেও তা বহাল তবিয়তে বাজারে বিক্রয় অব্যাহত, দুধে মেলামিন আছে কি নাই এর ফলাফল নিয়ে বিশেষজ্ঞগণের মতবিরোধ, মতবিরোধ দুর করতে সরকারের ভূমিকা রহস্যজনক, মিথ্যা প্রলুব্ধকরণ বা ধোঁকাবাজির বিজ্ঞাপন ইত্যাদির কারণে সর্বসাধারণ আজ দিশাহারা। আজ ২২ নভেম্বর ২০০৮ শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যেগে পবা মিলনায়তনে বেলা ৩টায় দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক আবু জাফর মহাম্মদ কেমিস্ট্রি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক নিলুফার নাহার কেমিস্ট্রি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ঠ লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে কামাল পাশা চৌধুরী।
প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত খাদ্য পাওয়ার। আমরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রতিদিন আমরা বাজার থেকে যা ক্রয় করি আদৌ এই গুলি কি নিরাপদ এবং এর মধ্যে যথাযোগ্য পুষ্টিমান থাকে ? বাজারে অধিকাংশ মাছ, মাংস,সবজি, দুধ, ফল-মূল নানা রকম বিষাক্ত ভেজালে পূর্ণ। পচঁন ও পোকা রোধ, রং সজীব রাখা ইত্যাদি কারণে এ সব খাদ্যে প্রয়োগ হচ্ছে ডিডিটি ও হেল্টাকেরা জাতীয় পেস্টিসাইড, ফরমালীন সহ বহু রকম রাসায়নিক উপাদান যে গুলো আমাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য খুবই হুমকিস্বরুপ। রান্নার পরও এর প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। বিভিন্ন ধরণের ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রতি বছর ২ লক্ষ লোক ক্যন্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী জানা যায় খাদ্যমান সঠিক না থাকার কারণে এবং ভেজাল মিশ্রনের ফলে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৮% লোক ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, ১ লক্ষ লোক প্রতি বছর কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চারা অপুষ্টি ও শারীরিক বিকলাঙ্গ হচ্ছে এবং শিশুদের মস্তিস্ক স্বাভাবিক ভাবে বিকাশ লাভ করতে পারছে না।
সেখানে সরকারও এক ধরণের গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে চলার নীতি অবলম্বন করে চলেছে। সরকারের এ উদাসিনতার কারণে বাংলাদেশে প্রস্তুতকারী ও আমদানীকারকদের মধ্যে ব্যবসায়ীক উদ্যেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে এ ধরণের বিষাক্ত খাদ্য নিয়ম বর্ভিূতভাবে আমদানী হচ্ছে। ৩ টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফলাফলে ৮ টি গুড়ো দুধের মধ্যে বিষাক্ত মেলমিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় অথচ আদালতের এক বিভ্রান্তিকর রায়ের কারণে এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারও অব্যাহত আছে। এগুলো ব্যবহারের ফলে সর্বসাধারণের ক্ষতির দায়-দায়িত্ব কে বহন করবে। গুড়ো দুধ ছাড়াও বাজারে অনেক রকম শিশুদের খাদ্য যেমন চকোলেট, ক্যান্ডি, চানাচুর, চিপস,আচার, হজমী,আইসক্রীম, ড্রিংকসসহ নানা ধরনের ভেবারেজ ব্যাপক ভাবে বিক্রয় হচ্ছে যে গুলোর মাঝে প্রচুর পরিমান নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত ক্যামিকেল বিদ্যমান। তা ছাড়াও এ গুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন গুওলো মিথ্যায় ভরপুর।
যা জরুরী ভিত্তিতে করণীয়:
১.খাদ্যের উপযুক্ততা নিশ্চিত না হয়ে শিশুখাদ্য বাজারজাত করা যাবে না; যদি বাজার জাত করা হয় তাহলে শিশুর স্বাস্থ্যগত অপুরনীয় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এবং ক্ষতি হলে এর দায়ভার বহন করবে কে ?
২. মিথ্যা প্রলুব্ধকরণ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে; কেননা খাদ্যের গুনাগুণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয় আমাদের সামনে উপস্থাপিত বিজ্ঞাপনের ভাষাসমূহ।
৩. বানিজ্য মন্ত্রণালয় নয় খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক একটি শক্তিশালী সংস্থা গঠন করতে হবে; স্বাস্থ্য নিয়ে কোন ধরণের বানিজ্য নয় সেহেতু স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত আলাদা সংস্থা হলে তারা শুধু এ বিষয়টির তদারকি করবে।
৪. বিষাক্ত খাদ্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ভোক্তা অধিকার আইন অবিলম্বে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
৫.বাজারজাতকৃত সকল খাদ্য দ্রব্যের ভেজাল ও বিষমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে;
৬ ভোক্তা অধিকার আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত আইনেই দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment