Thursday 11 November 2010

ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা দখলবাজদের শাস্তি চাই



ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা দখলবাজদের শাস্তি চাই
চারশত বছরের পুরনো মোগল রাজধানী ঢাকার অন্যতম কীর্তি লালবাগ কেল্লা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবময় নিদর্শন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে মোগলদের সবচেয়ে বড় অবদান স্থাপত্য নির্মাণ। বাংলাদেশের সভ্যতা সেসব বিরল মোগল স্থাপত্যের কারণে কীর্তিমান ও বিশ্বদরবারে পরিচিত তার মধ্যে লালবাগ অদ্বিতীয়। কেননা লালবাগ দূর্গ বাংলাদেশে মোগল আমলের একমাত্র প্রাসাদ দূর্গ এবং এর আদলে আর কোন দূর্গ মোগল সাম্রাজ্যে কোথাও নির্মিত হয়নি। তাই লালবাগ কেল্লা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এক অদ্বিতীয় মানবকীর্তি।

এই মোগল কীর্তির গুরুত্বকে উপলব্ধি করেই ইতিহাসবিদ, নগরবিদ, স্থপতি এবং সভ্যতা সচেতন নানা দেশের নাগরিকরা একে “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ” বা বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোর কাছে দাবি জানিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তালিকাতেও লালবাগের কেল্লা বা প্রাসাদ দূর্গ একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু যে প্রতœকীর্তি একই সঙ্গে বাংলাদেশের এবং বিশ্বসভ্যতার অংশ তাতে আজ বেদখল নিয়েছে প্রভাবশালী দখলবাজ চক্র।

কেল্লার পশ্চিম দিকের দেয়াল ভেঙ্গে তারা তুলেছে নিজেদের আবাস। তাদের কেউবা কেল্লার দেয়ালেই ভিৎ গেড়েছে নিজেদের ঘর-বাড়ির। দক্ষিণ দেয়ালের পাশে যে রাস্তা ছিল তা তো অনেক কাল আগেই বিলুপ্ত হয়েছে এবং তাই সভ্যতা বিনাশী এই দুষ্টচক্র অনায়াসেই ঢুকে গেছে দূর্গ প্রাকারের ভেতরে এবং কেউ কেউ ঠাই নিয়েছে দূর্গ প্রাকারের প্রায় চার ফুট প্রশস্থ দেয়ালে। তাছাড়া লালবাগ কেল্লার দেয়াল জুড়ে রয়েছে নানা পোস্টার হেন্ডবিল এবং এমনকি পেরেক ঠুকে টিনের সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। কেল্লা মেরামতে ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র এর স্থাপন-শৈলীর দিকে লক্ষ্য রাখা হয়নি। বরং ঠিকাদার সুলভ সংস্কার করতে গিয়ে কেল্লার ভেতরে অবস্থিত মসজিদের গা থেকে খসিয়ে দেওয়া হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর মোগল কারুকাজ এবং লাল বাগের দৃষ্টি নন্দন লাল রং মুছে ফেলে মসজিদের দেয়ালে দেওয়া হয়েছে সাদা রং এর প্রলেপ।

ইতিহাসের পরিহাসই বলতে হয় বার ভূইয়া ও আফগান বিদ্রোহ দমন করে আরাকান মগ ও পর্তুগীজ দস্যুদের বিতাড়িত করে একদা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর রাজমহল থেকে সরিয়ে এনে বাংলার শাসন কেন্দ্র যে ঢাকাতে স্থানান্তরিত করেন তাই আজ এদেশের ভ’মিদস্যুরা দখল করে নিচ্ছে। মোগলদের প্রাসাদ দূর্গও আজ অরক্ষিত। এই ইতিহাসের পরিহাসকে অবশ্য বিশেষ মাত্রা দিয়েছে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। কেল্লার সীমানার ভিতরেই গড়ে উঠেছে এ বিভাগের দপ্তর। প্রতœস্থলের সিমানার ভিতরে স্থাপনা নির্মাণ বাংলাদেশে সরকারের পুরাকীর্তি আইনের সুষ্পষ্ট লংঙ্ঘন।
  

১৯৬১ সনের পুরাকীর্তি আইনের ১২ (৩) এর সি ধারা অনুযায়ী এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারেও কেল্লার ভেতরে কোন স্থাপনা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে না।

কোন বিশেষ্জ্ঞ নয় লালবাগ কেল্লা দেখতে এসে একজন সাধারণ দশৃকও বুঝতে পারবেন এখানে পুরাকীর্তি আইনের বিধিবিধানের কোন প্রয়োগ নেই। দৃশ্যমান শুধু বিধির লংঙ্ঘন রাষ্ট্রের আইন কানুন বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে অবৈধ দখলদাররা যে কি ভয়ংকর হয়ে উটেছে তার চরম দৃষ্টান্ত লালবাগের সীমানার ভিতরে ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনটি বাড়ি। একটি দেশের প্রাচীন কীর্তিও যখন সেই দেশের অবৈধ দখলবাজদের তখন সে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে গর্ব করার কিছুই থাকে না। লালবাগের দুর্গের সীমানার ভেতরে এবং দূর্গের দেয়ালের গায়ে দেয়াল গেথে যে দখলবাজরা নিজস্ব ঘরবাড়ি তুলছে তারা এদেশের ইতিহাসের স্মারককে ধবংস করছে। দেশের মানুষের সম্পদ বিনষ্ট করছে। কারণ একটি দেশের পুরাকীর্তি সেদেশের সব মানুষের; সরকারের নয়। তবে সরকারের দায়িত্ব জনগণের সেই সম্পদ সুরক্ষা করা কিন্তু তা সুরক্ষিত না হয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

লালবাগ কেল্লাকে কেন সুরক্ষিত করা প্রয়োজন সে বিষয়ে আমরা সরকারকে অবহিত করতে চাই। লালবাগ একটি মাত্র দূর্গই নয়, পূর্ব পশ্চিমে লম্বা ২০০০ ৮০০ ফুট মোগল স্থাপনা র্৩-র্র্র্র্৯র্ পুরো দেয়াল বেষ্টিত চৌহদ্দিতে রয়েছে তিন তলা তোরণ। পরিবিবির মাজার, মসজিদ এবং মোগল যুগের দুর্লভ নিদর্মন সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর। স্থাপত্য এবং অন্যান্য প্রতœবস্তু দেখে মোগল সভ্যতার তাৎপর্য অনুভবের এক অদ্বিতীয় স্থান লালবাগ কেল্লা। তাই এই পুরাকীর্তি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সব্বোচ্চ সতর্কতা ও যতœ দাবি করে।

বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত প্রাচ্যের ভেনিস বলে আখ্যায়িত মোগল নগরী ঢাকার গৌরবময় কীর্তি লালবাগ কেল্লা। এ প্রাচীন কিির্ত বহু যুগের নানা ঘটনার সাক্ষী । ১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহের সময় দেশপ্রেমী শহীদ সিপাহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই দুর্গ। ইংরেজরাও এই মোগলকীর্তিকে দীর্ঘকাল অযতœ করেছে। তাই সিপাহী বিদ্রোহের পর এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পুলিশ বিভাগের প্রধান কার্যালয়। ১৯৫৩ খৃষ্টাব্দে পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের জিওসি (পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট) মোহাম্মদ আইয়ুব খানের নেতৃত্বে পুলিশ বিদ্রোহ দমনের নামে নিরীহ পুলিশদের হত্যা করা হয় এই দুর্গের ভেতরে।

১৯১০ খৃস্টাব্দে লালবাগ দূর্গপ্রাকার সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন হয়। ১৯৬২ তে কেল্লার চৌহদ্দির অন্যান্য স্থাপত্য-নিদর্শনের রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব লাভ করে এই বিভাগ। ১৯৭১ এর পর দুর্গের ভেতরের সব অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণ করা হয়। ১৯৭৪ এর মার্চে লালবাগ কেল্লার জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। মোগল আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক দেশি-বিদেশী পর্যটক, সার্ভেয়ার, ইতিহাসবিদ, পুরাতাত্ত্বিক ঢাকা নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং লালবাগের কেল্লা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। ঢাকার চারশত বছর পূর্তি উপলক্ষে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ ঢাকার উপর উনিশটি গবেষণা-গ্রন্থ প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এসব গ্রন্থে লালবাগ কেল্লা বিশেষ গুরুত্বে উপস্থাপিত হবে।

প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন হওয়ার পর সেই ১৯১০ খৃষ্টাব্দেই লালবাগ কেল্লার সীমানা ও নকশা তৈরি করা হয়। এই নকশা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এবং পৃথিবীর অন্য অনেক মোহাফেজখানায় সংরক্ষিত রয়েছে। এর নকশা মুদ্রিত অবস্থায় এবং এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। ঢাকা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রতিবেদন ১৯১৭(প্যট্রিক গেড্ডেস) অনুযায়ী লালবাগের আয়তন ২২ একর।
 

দখলের ফলে আজ আয়তন ১৭একর। বর্তমানে এই আদি নকশার দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায় অবৈধ দখলদাররা পশ্চিমের দেয়াল ভেঙ্গে কিভাবে নিজস্ব আবাস গড়েছে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আবুল হাশেম, রেলিন ও বাবুল চৌধুরী এসব বাড়ির মালিক এবং আমরা খোজ নিয়ে জেনেছি যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগও এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। লালবাগ কেল্লা রক্ষায় কতৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণের প্রমাণ মিলে লামি/সংরক্ষণ/২২/ঢাকা-১/১০/১৯২/২এই চিঠিতে, এই চিঠি কেল্লার দেয়াল ঘেষে উঠা একটি স্থাপন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে লিখা হয়, কিন্তু প্রায় এক বছর পূর্বে লেখা হলেও কেল্লার প্রাচীরে ৫ফিট দূরের বাড়িটিতে আজও চিঠিটি পৌছেনি। কতৃপক্ষের অবহেলায় কেল্লার দেয়াল ইতিমধ্যে স্থাপনাটি পাঁচতলা তৈরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। লালবাগ কেল্লার ভেতরে অবস্তিত প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দপ্তরের দালান থেকে কয়েক গজ দূরেই গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ঘরবাড়ি।

১৯৬৮ পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে পুরাকীর্তি ধ্বংস সাধন, ক্ষতিসাধন, লেখা বা খোদাই করা যাবে না এবং ২৬নং অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি বাণিজিক উদ্দেশ্যে কোন সংরক্ষিত পুরাকীর্তির বা তার অংশ বিশেষ আলোকচিত্র গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু কতৃপক্ষের অনুমতিক্রমে লালবাগ কেল্লায় হরহামেশাই বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন তৈরি সুটিং করার সময় অবকাঠামোর ব্যাপকক্ষতি সাধন করছে।

লালবাগ কেল্লা দেখভাল করার দায়িত্ব সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের। কেল্লার সীমানার মধ্যেই যে অবৈধ স্থাপনপা হয়ে গেল তা বোঝার জন্য তো তার গবেষণা করতে হয় না। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা বোধহয় ভুলে গেছেন যে সরকারি কোষাগার তেকে তাদের বিভাগ চালানোর জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় তা এদেশেরই জনগণের অর্থ। জনগনের প্রতœসম্পদ জনগণের অর্থেই রক্ষণাবেক্ষনের জন্য রাষ্ট্র এ বিভাগ পরিচালনা করে। এ লক্ষ্যে ানেক আইন কানুন ও বিধি বিধানও রয়েছে। আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই এক বিভীষিকাময় অবস্থার মধ্যে এদেশের পুরাকীর্তি নিপতিত।

সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষতি এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন ২০১০ বিল গত ২৭ জনু জাতীয় সংসদদে পাস হয়েছে। পর্যটন বিষয়ে যে আইন করেছেন তা আরও সর্বনাশ ডেকে আনবে। এ আইনের কাছে পুরাতত্ত্ব আইন ও ইমারত বিধি সবই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কারণ এতে বলা হয়েছে “ পর্যটন শিল্প রহিয়াছে অথবা পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রহিয়াছে এমন কোন এলাকাকে চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হইলে উক্ত এলাকাকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করিতে পারিবে।’ 

আইনে আরো বলা হয়, পর্যটন সংরক্ষিত এলাকায় বিশেষ পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করা যাবে। পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে যেকোন ধরনের কার্যক্রমে বিধি নিষেধ আরোপ করা যাবে। সরকার নিজ উদ্যোগে কিংবা যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে পারবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বিনোদনও সেবামূলক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। পাস হওয়া আইনে পর্যটন আইনের প্রাধান্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনে বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।’ এ আইনের সুবিধা নিয়ে কর্পোরেট পুজির এই দু:সময়ে কোন সংস্থা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানোর নামে লালবাগ কেল্লার ইজারাদারি কব্জা করতে পারে।

ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থার কাছে এদেশের পুরাকীর্তি নিরাপদ নয়। সরকারি দেখভালই যেখানে অত্যন্ত নাজুক সেখানে অন্য কোনো সংস্থাকে কে নিয়ন্ত্রন করবে ?
সমস্যা আছে, প্রতিকার নেই এ কথা সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরা চাই সরকার পর্যটন আইন বাতিল করে দেশের পুরাকীর্তি সংরক্ষণে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবেন এবং অনতিবিলম্বে লাল বাগ কেল্লার ভেতরের অবৈধ ৩ টি বাড়ি ও কেল্লার দেয়ালের গায়ে দেয়াল লাগিয়ে যেসব ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে তা উচ্ছেদ করে দেশের পুরাকীর্তি রক্ষার দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।

রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় দাবি

এদেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় রেল অত্যন্ত কার্যকর ও পুরানো একটি বাহন যা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেইে মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। এটি আমাদেরও যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত ছিল। সময়ের পরিক্রমায় আর অবহেলায় আজ রেলের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ডাবল লাইন ও ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ, দক্ষ লোকবল বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ইঞ্জিন ও বগি সংগ্রহ, রেলের কারখানা কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। যা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহজেই ভূমিকা রাখতে পারবে। পৃথক মন্ত্রণালয়ই এর সমাধান।

দূষণ, জ্বালানি ব্যয়, দূর্ঘটনা ও দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু-আর্থিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ, যাতায়াত সংকট কমাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সিলেট, ঢাকা থেকে পঞ্চগড়, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, ঢাকা থেকে খুলনাসহ দেশের সকল জেলার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ডাবল রেল লাইন চালু করা দরকার।

ক্রমবর্ধমান মানুষের যাতায়াত চাহিদা পুরণ করতে রেল ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করার বিকল্প নাই। রেল পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বিবেচনায় ভূমি ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক পথের জন্য অনেক বেশি জমি অধিগ্রহণ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। দূষণ, জালানি ব্যয়, চলাচলের জন্য দূর্ঘটনা ও আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে দূরপাল্লার যাতায়াতের ক্ষেত্রে রেলকে প্রাধান্য দেয়া দরকার।


Saturday 6 November 2010

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেই তামাক চাষ বন্ধে দায়িত্ব নিতে হবে

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেই তামাক চাষ বন্ধে দায়িত্ব নিতে হবে

তামাক কোম্পানির কারণে কৃষি জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন ঠিক মতো খেতে পারে না। খাদ্য যোগান যেখানে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায় তামাকের আগ্রাসী বিস্তার দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত করছে। তাই তামাক চাষ বন্ধে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
হবে।



তামাক চাষ বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমি হ্রাসের পাশাপাশি গোখাদ্য সংকট, শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত, তামাকজনিত রোগ বৃদ্ধি, সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তামাক চাষের জন্য পার্বত্য এলাকার জমি ও নদীর তীর দখল হচ্ছে অত্র এলাকায় কৃষিজমি হ্রাসের প্রেক্ষিতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বন উজার করে কাঠ কাটা হচ্ছে, তামাক শুকানো হচ্ছে। গাছ কাটার প্রেক্ষিতে পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এ ধরনের বিদেশী গাছ লাগাচ্ছে বনাঞ্চলে। বিদেশী গাছ আমাদের জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।

ক্রমাগত তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এজন্য তামাক কোম্পানিগুলো নতুন নতুন এলাকার কৃষি জমিতে দরিদ্র কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। একটা সময় পর জমিগুলো যে কোন খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তামাক চাষের সময়কালটা এমন, তামাক চাষ করার কারণে সব মৌসুমের খাদ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা দরকার। কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারগন তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে খাদ্য শস্য উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান করে তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষনে তামাক চাষ এর ক্ষতিকর দিক ও তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণ. কৃষি জমিতে তামাক চাষ বন্ধ করা এবং কৃষি নীতিমালায় কৃষি পণ্যের তালিকা থেকে তামাককে বাদ দেয়া, চলনবিল (পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ), মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষ অবিলম্বে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, তামাক চাষে সার, কীটনাশকসহ সকল ধরনের সুবিধা নিষিদ্ধ করা, তামাকের পরিবর্তে খাদ্য শস্য উৎপাদনে কৃষকদের সহযোগিতা প্রদান এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং তামাক কোম্পানি কার্যক্রমে কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ না করতে নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানান।

এ সময় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। কৃষি জমির উর্বরতা রক্ষা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে তাদের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

Thursday 28 October 2010

স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে হাঁটার জন্য জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে আনুন | ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক

স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে হাঁটার জন্য জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে আনুন | ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক

ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার বৃদ্ধ, মহিলা, শিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং মালামাল নিয়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য সহায়ক নয়। অথচ অনেকের পক্ষে অসম্ভব এই কাজটি না করলে ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ঘন্টার জেল প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল সাপেক্ষে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিন।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জনগনকে বাধ্য করতে ২৪ ঘন্টার জেল দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে। যে সকল ব্যক্তিরা মন্ত্রীকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ দেয় তাদের থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। কোন ব্যক্তিগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ মন্ত্রীর জন্য বাঞ্চনীয় নয়। বরং জনস্বার্থ রক্ষা ও জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রীর কার্যক্রম সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে। এজন্য অবিলম্বে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রয়োজন। বক্তারা দূর্ঘটনা হ্রাসে শহরে গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেন। পাশাপাশি ঢাকার সর্বত্র জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে এনে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর জোরারোপ করেন।

ঢাকার ৬০% চলাচল হয় পায়ে হেঁটে। পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বললেও পথচারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য কোন পদক্ষেপ নেই। ঢাকা পৃথিবীর একটি শহর যেখানে এত সংখ্যক পথচারী থাকা স্বত্বেও বর্তমানে কোন জ্রেবা ক্রসিং নেই বললেই চলে, অথচ একসময় এই পদ্ধতিতেই রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মূলত গাড়ি চলাচলকে প্রাধান্য দিতেই পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মত অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। হেঁটে চলা মানুষের অধিকার, অথচ এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যাদের শারীরিকভাবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের হাঁটার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

ঢাকা শহরে বিভিন্নভাবে পথচারীদের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে লোহার গ্রীল, প্রাইভেট গাড়ী পার্কিং করে ফুটপাত দখল, স্থাপনার জিনিসপত্র ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা, ফুটপাত সংকুচিত করা, বাড়ী ও দোকানে গাড়ি ঢোকাতে ফুটপাতে কিছুক্ষণ পরপর কেটে নিচু করাসহ বিভিন্নভাবে মানুষ হেঁটে চলাচলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। অথচ হাটার জন্য কম জায়গা দরকার, দূষণ হয় না, জ্বালানী ব্যয় নাই। সবচেয়ে বড় কথা হেঁটে চলাচলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এ সকল বিবেচনায় সারা বিশ্বজুড়ে শহরে পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরো সুসংহত করছে। অথচ ঢাকা শহরে সকল সিদ্ধান্ত, আইন-নীতিমালা, প্রকল্প সবকিছুতেই পথচারীদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পার্বত্য জেলাসহ সর্বত্র তামাক চাষ নিষিদ্ধ করুন

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পার্বত্য জেলাসহ সর্বত্র তামাক চাষ নিষিদ্ধ করুন | খাদ্যের জমি ধ্বংস ও ক্ষতিকর খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ করায় জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, জীববৈচিত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া তামাক চাষ খাদ্য সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। তামাক চাষ কৃষি জমিকে ক্রমশ ধবংশ করছে। জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে তামাক কোম্পানিগুলো নতুন নতুন এলাকায় উর্বর খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ করানোর জন্য নানারকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দরিদ্র ও নিরক্ষর কৃষকদের তামাক চাষে ধাবিত করছে। তাই অবিলম্বে খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। এবং দরিদ্র ও নিরক্ষর কৃষকদের তামাক চাষে ধাবিত করার জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তামাক চাষের জন্য জমি তৈরি, চারা রোপন, পাতা তোলা ও তামাক গাছ উৎপাদন ইত্যাদির জন্য আগষ্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৮ মাস সময় লাগে। তামাক চাষের কারণে বছরের প্রধান তিনটি মৌসুমের ফসলই নষ্ট হয়। তামাক চাষের কারণে আলু, বেগুন, টমেটো, মূলা, বাদাম, কপি, মিষ্টি কুমড়া, সরিষা, গম, নানারকম ডাল, পেয়াজ, তরমুজ সহ সকল রবিশষ্য ও ঢেড়শ, বরবটি, করলা, ঝিঙ্গা, পালংশাক, পুইশাক, ডাটা, পাটশাকসহ শীতকালীন সব সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া সময়ের মারপ্যাচে আমন ধান ও বোরো ধান চাষ করা যায় না তামাক চাষের জমিতে, যে কারণে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন।

বাংলাদেশে যে পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, সে জমিগুলোতে খাদ্য চাষ করলে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দূর করা সম্ভব। তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় গোখাদ্য সংকট, শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ব্যহত, তামাকজনিত রোগ ও মানুষের মৃত্যু বৃদ্ধিসহ পারিবারিক ও সামাজিক সংকট বেড়ে যাচ্ছে। বান্দরবানসহ পার্বত্য জেলাগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র সবই হুমকির সম্মুখীন। তাই পার্বত্য জেলাসহ সর্বত্রই খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা দরকার।

দেশের কৃষি জমি ও বনভূমি রক্ষা, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ, খাদ্যসংকট মোকাবেলায় কৃষি জমিতে তামাক চাষ বন্ধ করা, বনায়নের নামে তামাক কোম্পানিগুলোর বৃক্ষরোপনের নামে বিদেশী গাছ লাগানো নিষিদ্ধ করা এবং দরিদ্র কৃষকদের দরিদ্রতার চক্রে ধাবিত করা ও তামাক চাষে ধাবিত করায় তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা।

ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে যানজট নিয়ন্ত্রণ হ্রাস সম্ভব নয়।

ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে যানজট নিয়ন্ত্রণ হ্রাস সম্ভব নয়। যাতায়াত ব্যবস্থায় কার্যকর মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণে কোন উদ্যোগ নেই। যার প্রেক্ষিতে লাগামহীনভাবে যানজট বেড়ে চলেছে। ঢাকায় পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ হেঁটে, রিকশা, বাসে ও অন্যান্য গণপরিবহনে চলাচল করে। কিন্তু যানজট নিরসনের নামে গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজট হ্রাসে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পাশাপাশি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী।

পথচারীদের বাধ্যতামূলক ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জেল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, এ ধরনের পরিকল্পনার পূর্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীকে নিয়মিত গনপরিবহন ব্যবহার ও হেঁটে চলাচল করে দূভোর্গ অনুধাবনের জন্য পরামর্শ দেন। তারা বলেন, পথচারীরা অপরাধী নয়, শারীরিক কষ্টের কারণে পথচারীদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার সম্ভব নয়। নিরাপত্তার কথা বলে পথচারীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, অথচ বেপরোয়া গাড়ী চালনা বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বৃদ্ধি, নারী, শিশু, ক্লান্ত পথিক, হৃদরোগী, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ ব্যক্তিদের কথা বিবেচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক। এ ধরনের কর্মকান্ড জনমনে রিরূপ প্রভাব ফেলবে, যা সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে।

হকার একটি বৈধ পেশা হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবস্থাপনায় মনযোগ না দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে। নগরে ব্যক্তিগত গাড়ীর জন্য পার্কিং প্রদান করা হচ্ছে কিন্তু মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিন্তু ভেবে দেখা হয় না, হকাররা হেঁটে চলাচলকারীদের আকর্ষন করে এবং নিরাপত্তা দেয়। হকারদের লাইসেন্সের মাধ্যমে বিনিময়ে সুসৃঙ্খলভাবে ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যা বেকার সমস্যার অনেকখানি সমাধানের পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখবে।

ইতিপূর্বে যানজট নিরসনের নাম করে বাস, ট্রাক, রিকশা, ট্রেন এবং পথচারী চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করায় জনসাধারণের হয়রানি বেড়েছে, কোটি টাকা লস হয়েছে অথচ জবাবদিহীতার বালাই নেই। নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গ প্রাইভেট গাড়ির সুবিধাভোগী হওয়ায় এ নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ হয় না।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে জেল প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করা; পথচারীদের নিরাপদ ও সহজে যাতায়াতে জ্রেবা ক্রসিং ফিরিয়ে আনা; হকারদের লাইসেন্সের বিনিময়ে ফুটপাতে সুসৃঙ্খলভাবে বসার ব্যবস্থা করা; এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প এর পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ করা; সাইকেলের জন্য পৃথক লেন ও স্ট্যান্ড তৈরিসহ চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা; সিটি বাসের সঙ্গে আন্তঃনগর বাস, রেল ও নৌ-পথের সমন্বয় করা; ঢাকার চারপাশের নদী এবং অভ্যন্তরীণ খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণ করে নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; ঢাকার সর্বত্র রিকশায় চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি করা এবং নিরাপত্তার জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা; প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করা; নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা; সর্বত্র পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে ঘন্টা হিসেবে পার্কিং ফি গ্রহণ করা; প্রাইভেট কারের লাইসেন্স বরাদ্দ সীমিত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে অদুরদর্শী পরিকল্পনা অন্তরায়

দীর্ঘদিন পর কিছু ঋণ প্রদানকারী সংস্থা রেলের উন্নয়নে ঋণ প্রদান করে। কিন্তু এ সকল ঋণ সহায়তায় রেল উন্নয়নে স্টেশন রি মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা কিভাবে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে তা একটি স্টেশনের উদাহরণ থেকেই অনুমান করা যথেষ্ট। রি মডেলিং প্রকল্পের একটি স্টেশন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন। এই জংশন স্টেশনের রি মডেলিং বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়, ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ওই স্টেশনের ইন্টার লকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তন বাবদ আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অর্থাৎ সর্ব সাকুল্যে ২৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা স্টেশন রি মডেলিং বরাদ্দ দেয়া হয়। এই রি-মডেলিংয়ের টাকা থেকে অনধিক ২৫ কোটি টাকায় একটি অত্যাধুনিক রেল ইঞ্জিন ক্রয় বা সংগ্রহ করেও অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কাঁচামালের যোগান দেয়াসহ রেলওয়ে কারখানায় ওভার টাইম চালু করে কমপক্ষে ২০টি ইন্টারসিটি ট্রেনের অকেজো শোভন চেয়ার কোচ মেরামত করা যেত। ওই মেরামতকৃত কোচ ও সংগ্রহকৃত ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গঠিত আন্তনগর ট্রেনটি ঢাকা চট্টগ্রাম লাইনে চলাচলের ফলে রেলের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেতো প্রায় ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার উর্ধে। অথচ দেড়শ কোটি টাকার অধিক ভর্তূকি প্রতিষ্ঠানে এহেন রি-মডেলিং মানে রেলওয়েকে বাকীর খাতায় শূন্যই গুনতে হচ্ছে। বর্তমান সময়কালে অন্য যেসব স্টেশন রি-মডেলিংয়ের কাজ হয়েছে বা হচ্ছে তন্মধ্যে নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া,শায়েসত্মাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কুমিল্লা, লাকসাম ও ফেনী স্টেশন উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া পশ্চিমাঞ্চলেও এরকম বহু স্টেশন টেকসই কাজের পরিবর্তে নিম্নমানের কাজ করিয়ে অধিক অর্থ অপচয়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঋণের টাকা যখন সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন রি-মডেলিং করা হচ্ছে, ঠিক সমসাময়িক ঘটনা হচ্ছে অর্থের অভাবে সিলেট-খাজাঞ্চি-ছাতক রেলপথ সংস্কার করা যাচ্ছে না, ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক মাসে রেল লাইন সংস্কারের অভাবে অনেক দূর্ঘটনা হয়েছে এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। অথচ টাকা নেয়া হচ্ছে স্টেশন আধুনিক করা জন্য। [sb]মানুষ যদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গনত্মব্যে পৌছতে পারে তবে স্টেশনে বসে থাকবে কেন? [/sb]স্টেশন আধুনিক করা অপেক্ষা রেল লাইন উন্নয়ন করা জরুরি, জরুরি রেলের বগি ও ইঞ্জিন বাড়ানো। একদিকে বলা হচ্ছে ঋণ ছাড়া চলা সম্ভব নয়, অপর দিকে এমন খাতে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া হচ্ছে যা অপ্রয়োজনীয়। যেসব স্টেশন রি-মডেলিং করা হয়েছে সেসব স্টেশনের আয় বৃদ্ধি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা, মূল্যায়ণ করে জনসম্মুখে তুলে ধরা প্রয়োজন। কারণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিক জনগণ। রেলওয়ে জাতীয় সম্পদ বিধায় রেলের মালিকও আপামর জনগণ এবং তাদের এ তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।

আন্তজার্তিক অর্থলগ্নিকারী (ঋণ বাণিজ্যিক) প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের চেয়ে সড়ক পথের উন্নয়নে বেশী আগ্রহী। দ্বিতীয়ত ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো শর্তসাপেক্ষে রেলওয়ের উন্নয়নখাতে সরকারকে ঋন দিয়ে থাকে যা স্টেশন রি মডেলিংয়ের মত অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। তৃতীয়ত তথাকথিত ঋণ সংস্থার পরামর্শ ও দিক নির্দেশায় অনেক উন্নয়ন গৃহীত হচ্ছে। ফলে দেশীয় অনেক প্রেক্ষাপটের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায়, আশানুরূপ উন্নয়ন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দেশীয় বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা জরুরি। আন্তজাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে বিভিন্ন উন্নয়ন নীতিমালা প্রণীত হয়। অভিযোগ রয়েছে এ সকল পরামর্শ যা দেশের শিল্প কারখানা ও সেবা খাতগুলোর উন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হতে নিরুৎসাহিত করে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুবাদে এ দেশকে বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিণত করতে দেশের শিল্প কারখানা ও সেবা খাতগুলোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে পরিশেষে সবকিছু ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ প্রদানই এসব সহযোগীদের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে অনেকেই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। বিগত দিনে উন্নয়নের নামে এই এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই খুলনা বাগেরহাট, মোগল হাট লালমনির হাট, ভেড়ামারা-রায়টা, নরসিংদী-মদনগঞ্জসহ বিভিন্ন রেলপথ বন্ধের মাধ্যমে সংকোচন করা হয়েছে।

রেলওয়েতে দীর্ঘদিন ধরে স্টেশন রিমডেলিং এর মতো বিদেশী ঋণপ্রদানকারী সংস্থার ঋণের অর্থ প্রকৃতপক্ষে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে যা আদৌ এ মুহূর্তে জরুরী প্রয়োজন ছিলনা বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে রেলওয়ে সেবাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়ক হতো সেসব খাতে যথেষ্ট বরাদ্ধ নেই। ফলে রেলের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত ঋণের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে বছরের পর বছর চলে যাবে। বস্তুতপক্ষে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কারণে রেলের সত্যিকার উন্নয়ন হয়ে উঠেছে বাধাগ্রসত্ম, যা কারো কাম্য নয়। রেল লাইনের সংস্কার নেই, বগি নেই, ইঞ্জিন নেই ইত্যাদি সমস্যা জর্জরিত রেলওয়ে এহেন বেহাল দশা থেকে উত্তোরণে উপযুক্ত খাতে ঋণের টাকা ব্যয় না করে শুধু স্টেশন রিমডেলিং করার অর্থ হলো আশীতিপর বৃদ্ধাকে মেকাপ লাগিয়ে অষ্টাদশী তরুনী বানানোর ব্যর্থ চেষ্টারই নামানত্মর মাত্র।

ঋণ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন এ অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে? এ ঋণ হতে কি পরিমান লাভ হবে? যদি দেখা যায়, স্টেশন আধুনিকায়নের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু রেল লাইন সংস্কার, ইঞ্জিন বা বগি ক্রয়ের সমস্যার জন্য রেল যোগাযোগ বিঘি্নত করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের ঋণ গ্রহন না করা উচিত। মৌলিক প্রয়োজনের পরিবর্তে এ ধরনের ঋণ গ্রহন অপচয়। কারণ এ ধরনের অহেতুক ঋণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে দূর্বল করা হয়।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের চার বছর মেয়াদী চলমান সংস্কার কর্মসূচীকে ঘিরে খোদ রেলওয়েসহ বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, এডিবি'র ঋণ ও পরামর্শ সংস্কারের নামে বাংলাদেশ রেলওয়েকে পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করার পায়তারা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবং অনুযোগ সর্তকতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ যে সকল প্রতিষ্ঠানে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে তা আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তর স্বার্থে এডিবির ঋণে চলমান সংস্কার কর্মসূচী মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

কতটা গতির দরকার? কতটা গতিতে চললে রিকশা ঢাকায় চলতে পারবে?

যানজট একটি আমাদের সবার জন্য সমস্যা আর এই সমস্যাকে পুজিঁ করে দেশি বিদেশি ব্যবসায়ীক শ্রেনী নেমে পড়েছে ব্যবসায়। জনগণকে জিম্মি করে তারা বছরের পর বছর ঢাকায় জনগণের টাকায় কিংবা ঋণের টাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু যানজট কমেনি। শুধু প্রকল্পের বৃদ্ধিই ঘটছে ধারাবাহিক ভাবে। এই রকম অনেক প্রকল্প নিয়েই সুনিদিষ্ট তথ্যসহ তাদের ব্যবসার কথা জনগন ইতিমধ্যে জেনেছে।

গতকাল ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার সাথে জড়িত একটি বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তার কথা আজ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি রিকশা নিয়ে কথা বলছেন রিকশা ধীর গতি সম্পন্ন যান। আর তাই মহাসড়কে রিকশা উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু অতীতেও বিভিন্ন রাস্তা থেকে রিকশা উচ্ছেদ করা হয়েছে ফলাফল শুভ হয়নি। যাত্রীদের যাতায়াত সময়-ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, যানজট বৃদ্ধি, পরিবহণ কোম্পানীগুলোর পরিবহণ পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু পোস্টটি বড় হয়ে যাবে ভেবে কয়েকটি পোস্ট দিব ঠিক করলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের পোস্ট " রিকসা কি আসলেই ধীর গতি সম্পন্ন যান‍"আজ এই ফোরামে এই বিষয়টি নিয়ে লিখছি আমাদের সবার যাতে রিকসা ধীর গতি সম্পন্ন যান এই সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তন ঘটে। রিকশা উচ্ছেদের অন্য কোন কারণ থাকতে পারে কিন্তু ধীর গতি সম্পন্ন যান তা উচ্ছেদের যুক্তি সই কারণ নয়।
রিকসা কি আসলেই ধীর গতি সম্পন্ন যান?
যখন অধিকাংশ যান্ত্রিক যানবাহন অযান্ত্রিক যানবাহন অপেক্ষা গতিশীল, তখন গতি আসলেই বিবেচ্য একটি বিষয়। কিন্তু জনবহুল শহরের প্রেক্ষিতে গতির বিষয়টি একটু ব্যতিক্রম। ঢাকা শহরের বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে স্বল্প পরিমান জায়গায় অনেক লোক চলাচল করে থাকে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সৃষ্টি হয় যানজটের। ঢাকার মতো বিশ্বের অন্য শহরগুলোতেও এই সমস্যা বিরাজমান। অযান্ত্রিক যান না থাকা এবং ব্যয়বহুল রাস্তা নির্মাণের পরও বিশ্বের অধিকাংশ শহর থেকে এ সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।

মধ্য লন্ডনে গাড়ির গতিবেগ ঘন্টায় ৮ কিঃ মিঃ যা ১৮৮০ সালে ঘোড়ার গাড়ির সমপরিমান। কখনো কখনো এ গতি সাইকেল থেকেও ধীর এবং কখনো কখনো পায়ে হেটে চলাচলের সমপরিমান হয়। বাইসাইকেলে ঘন্টায় ১০-১৫ কিঃমিঃ বা তার চেয়েও বেশি যাওয়া যায়। ঢাকা যে সকল রাস্তায় অনেক আগেই অযান্ত্রিক যান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে এখন অসহনীয় যানজট বিরাজ করছে এবং সার্বিক যাতায়াতের সময়সীমাও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় যান্ত্রিক যানবাহনে শহরের দূরবর্তী এলাকায় যেতে রিকসা/বাইসাইকেলের প্রায় সমান সময় প্রয়োজন হয়। সেখানে রাস্তায় যেহেতু কোন অযান্ত্রিক যানবাহন নেই সেহেতু সেখানকার রাস্তার গতিহীনতার জন্য অযান্ত্রিক যানবাহনকে দায়ী করা যাবে না। অর্থাৎ যান্তিক যান নিষিদ্ধ করেও ভাল কোন সুফল পাওয়া যাবে না। বরং অধিক যান্ত্রিক যানের কারণে এই রাস্তাগুলোতে অত্যাধিক হারে বায়ুদূষণ ঘটছে এবং যাতায়াতের অনুপোযোগি হয়ে পড়ছে।

মিরপুর রোড, ভিআইপি রোড থেকে রিকশা উচ্ছেদ করা হয়েছে কিন্তু যানজট আগের চেয়ে বেড়েছে। তাহলে রিকশার সাথে যানজটের বিষয়টি আমাদের কাছে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে?সমস্যা অন্য জায়গায় একটু লক্ষ্য করুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ফিলিপাই, ইন্দোনেশিয়া যানজটপূর্ণ শহরগুলোর কথা। তাদেরই বিভিন্ন পরামর্শ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শহরগুলো যানজটের শীর্ষস্থান অধিকারী শহর হিসেবে নাম লিখাতে পেরেছে। তারা সেখানেও একই ভাবে রিকশা উচ্ছেদ করেছে। ওখানে ব্যর্থ যানজট সমাধানে কাল্পনিক চেষ্টায় এখন যানজট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বেড়েছে তাদে কয়েক গুণ। আমাদের দেশেও একই র্ফমুলা প্রয়োগ করা হচ্ছে।

আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে নয়তো আমাদের প্রিয় ঢাকা ব্যাংককের মত যানজটপূর্ণ শহর হবে। ব্যাংককে মোট্রে রেল, স্কাইরেল, ফ্লাইওভার, নৌপথ সবই আছে। সাথে আছে প্রচন্ড যানজট। পাশপাশি ওদের ব্যবসা কিন্ত প্রতিবছরই বাড়ছে। আসুন চিনে নেই তাদের নয়তো আমাদেরও যানজট আর যানজট শব্দের ফাঁদে ফেলবে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে। কিন্তু যানজট থেকে মুক্তির স্বপ্ন আমাদের স্বপ্নই থাকবে।

ছবিটি যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রিকশা উচ্ছেদের জন্য একটি ঋণবাণিজ্যিক সংস্থা আমাদের দেশের নীতি নির্ধারনী সংস্থাদের সরবারহ করেছেন। আর কর্তারা যানজট নিরসনের কোন যুতসই কাজ না করে শুধুমাত্র সেই প্রতিষ্ঠানের সরবারহকৃত ম্যাপের বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছেন। যা বাস্তবায়ন হলে ঢাকায় যানজট বৃদ্ধি পাবে তা তাদেরই গবেষণায় সুস্পষ্ট। আমরা কোন পথে যাব তা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে।

তড়িৎ-চৌম্বকীয় দূষণ মানব দেহ, ফল-ফসল ও জীবজগতের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর

বিভিন্ন প্রকার দূষণ আমাদের পরিবেশকে দিন দিন বিষাক্ত করে তুলছে। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, আলোকদূষণ ইত্যাদির মধ্যে আরও একটি গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য দূষণ যুক্ত হয়েছে যা তড়িৎ চৌম্বকীয় দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ। তারহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তির যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের মারাত্মক ক্ষতিকর তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ উপহার দিচ্ছে। বিল্ডিং ও লোকালয়ে বেইজ এন্টিনা স্থাপনে তা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি নষ্ট করে অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। বর্তমান বিশ্বে ইলেক্ট্রনিক্্র যোগাযোগ মাধ্যমকে অগ্রাহ্য করা কঠিন কিন্তু তা ব্যবহার করতে হবে মাত্রারেখে ও অতি সকর্ততার সাথে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সঠিক গবেষণার মাধ্যমে এ নিরব অতি ভয়ানক দূষণকে জনসম্মুখে তুলে ধরা ও সরকারীভাবে রোধ কল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।


তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় ঃ (ক) আয়নাইজিং (খ) নন-আয়নাইজিং। আয়নাইজিং বিকিরণ মানব দেহের ভিতর দিয়ে গমন করলে রক্ত কণা সহ দেহ কোষের অনু সমূহকে আয়োনিত করে। কোষের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয় ও কর্মকান্ড ব্যহত হয় এবং তাৎক্ষনিক মৃত্য বা পরবর্তীতে লিউকোমিয়া ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত কম শক্তি সম্পন্ন তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যাহা রক্ত কনা বা দেহ কোষের অনুকে ভাঙ্গেতে পারেনা তাদেরকে নন-আয়নাইজিং বিকিরণ বলে। তাপ অনুৎপাদকারী নন-আয়নাইজিং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যেমন লিউকেনিয়া, ব্রেইন ক্যান্সার, স্মৃতি শক্তির হ্রাস ও অন্যান্য মারাত্বক রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য যারা শক্তিশালী তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে বেশিক্ষণ অবস্থান করছে তারা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন-পাওয়ার লাইনম্যান, ইলেকট্রিক রেলওয়ে অপারেটর, ইলেকট্রিসিয়ান, ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার প্রভুতি। অন্য পেশাজীবির তুলনায় এরা ব্রেইন কেনসার, লিউকেমিয়া এবং লিমফোম্মিয়ায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে বেশি সময় অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে ব্রেইন কেনসারে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে অবস্থানকারীর তুলনায় আড়াই গুণ বেশি।


শিশু কিশোর ও তরুণ ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য তড়িৎ দূষণে বেশি ঝুঁকিপুর্ণ এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাদের দেহ সমূহ এখনও বর্ধনশীল এবং তরলে পূর্ণ। ফলে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ খুব দ্রুত কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং কোষের মারাত্বক ক্ষতি করে। বর্তমানে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ শুনা যাচ্ছে যে বেইজ এন্টিনা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত টাওয়ারের কারণে ফলন কম এবং নষ্ট হচ্ছে। যা অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। যেমন যে বিল্ডিং এর উপর এন্টিনা স্থাপন করা হয়েছে এর আশে পাশের আম ও নারিকেল গাছে ফল ধরার পরিমাণ কমে গেছে অথবা একবারেই ধরছে না। ফুল অবস্থায়ই ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু এন্টিনা স্থাপনের পূর্বে নিয়মিতভাবে আম গাছে আম ও নারিকেল গাছে নারিকেল ধরত। তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিকগুলি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে একসময় তা আমাদের জন্য মহামারি আকারে ক্ষতি হিসেবে দেখা দিবে। এখন থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার ও বেইজ এন্টেনা ব্যবহারের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমারা থাকা প্রয়োজন।


যোগাযোগের আধুনিক প্রযুক্তি আমরা অবশ্যই ব্যবহার করব কিন্তু তা কোটি জীবনের বিনিময়ে নয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের ও প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ জনগনকে আরো অনেক সচেতন করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে এখনই এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

Tuesday 20 April 2010

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুফল পেতে আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন

গনমাধ্যমের সাথে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র মতবিনিময় সভায় বক্তারা
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুফল পেতে আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন

ধূমপান ও তামাকজাতদ্যব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আইনটি প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। তাই আইনটির সুফল পুরোপুরি পেতে এই আইন উন্নয়ন করা প্রয়োজন। আজ সকাল ১১.০০টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন বক্তারা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যায়যায়দিন এর রেজাউল করিম, ইত্তেফাকের মুন্না রায়হান, ভেরের কাগজের কবির হোসেন, দৈনিক সংগ্রামের সাদেকুর রহমান, দৈনিক ডেসটিনির সুলতানা কণা, বাংলাদেশ সময় এর সঞ্জয় কুন্ড, আমাদের সময় এর শফিকুল ইসলাম জুয়েল, দৈনিক সংবাদ এর নিখিল ভদ্র, দৈনিক সংবাদপত্রের প্রশান্ত মজুমদার, দৈনিক ভোরের ডাক এর সিরাজুজ্জামান, দৈনিক খবরপত্র এর ওবায়দুর রহমান শাহীন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুবুল আলম ।

সভায় বক্তারা বলেন, আইনটির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানিগুলো আইনকে পাশ কাটানোর নিত্য নতুন কৌশল আবিস্কার করছে। কোম্পানীর এ সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি আইনকে জনকল্যাণমূখী করে বাস্তবায়নে জনসাধারনের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, এফসিটিসি বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিষয়ক চুক্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ চুক্তি গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক এ চুক্তি স্বাক্ষর ও র‌্যাটিফাই করেছে। তাই এফসিটিসি’র আলোকে আইন উন্নয়নের বাদ্যবাধকতা রয়েছে। এফসিটিসি অনুসারে বিজ্ঞাপন বন্ধ, চোরাচালান রোধ, মোড়কের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ককারণবানী, কর বৃদ্ধি, শুল্কমুক্ত বিক্রি বন্ধকরণ, অধূমপায়ীর অধিকার সংরক্ষন ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য দিয়ে আইনের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে হবে।

তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্য বলতে তামাক হতে তৈরী যে সকল দ্রব্য ধূমপানে মাধ্যমে শ্বাসের সাথে টেনে নেয়া যায় অর্থাৎ বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রণ (মিক্সার) ও ইহার অন্তর্ভুক্ত হবে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাদা পাতা, জর্দ্দা, গুল, খৈনী ইত্যাদি তামাকজাতদ্রব্য ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই এ সকল দ্রব্যসহ অন্যান্য তামাকজাতদ্রুব্য গুলো আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আইনে পাবলিক প্লেসের আওতায় রেষ্টুরেন্ট এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে আনা হয়নি। এসকল স্থানকে ধূমপানমুক্ত স্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এবং পাবলিক পে¬স ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত না করার প্রেক্ষিতে মালিক, ম্যানেজার, তত্ত্বাবধায়ক ব্যক্তিকে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান করতে হবে।

তারা আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে অবৈধ বিজ্ঞাপনের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে যা তামাক কোম্পানীর জন্য খুবই সামান্য। এই জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তামাক কোম্পানির নাম, রং, লোগো দ্বারা উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারতে হবে।

বর্তমানে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ৩০% শতাংশ জায়গাজুড়ে সতর্কবাণী পদর্শিত হলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ নিরক্ষর লোকের দ্বারা তা পড়া সম্ভব নয়। তাছাড়া একটি ছবি কয়েক হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী তাই অনেক উন্নত দেশের মত আমাদের দেশেও প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদর্শনের বিধান করতে হবে। পশাপাশি স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থা ও কোম্পানি কর্তৃক আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া আইন উন্নয়নে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির ও সিগারেটের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের সু স্পষ্ট বিধান এবং সকল নাগরিককে আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে মামলার করার অধিকার আইনে অর্ন্তভুক্তির দাবী জানান বক্তারা।

দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়

দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে আমদানীকৃত গুড়ো দুধে মেলামিন এর অস্তিত্ব সনাক্ত হওয়া, সনাক্ত হওয়ার পরেও তা বহাল তবিয়তে বাজারে বিক্রয় অব্যাহত, দুধে মেলামিন আছে কি নাই এর ফলাফল নিয়ে বিশেষজ্ঞগণের মতবিরোধ, মতবিরোধ দুর করতে সরকারের ভূমিকা রহস্যজনক, মিথ্যা প্রলুব্ধকরণ বা ধোঁকাবাজির বিজ্ঞাপন ইত্যাদির কারণে সর্বসাধারণ আজ দিশাহারা। আজ ২২ নভেম্বর ২০০৮ শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যেগে পবা মিলনায়তনে বেলা ৩টায় দুধে মেলামাইন ও বিষাক্ত খাদ্যে ও বর্তমান অবস্থায় করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক আবু জাফর মহাম্মদ কেমিস্ট্রি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক নিলুফার নাহার কেমিস্ট্রি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ঠ লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে কামাল পাশা চৌধুরী।

প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত খাদ্য পাওয়ার। আমরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রতিদিন আমরা বাজার থেকে যা ক্রয় করি আদৌ এই গুলি কি নিরাপদ এবং এর মধ্যে যথাযোগ্য পুষ্টিমান থাকে ? বাজারে অধিকাংশ মাছ, মাংস,সবজি, দুধ, ফল-মূল নানা রকম বিষাক্ত ভেজালে পূর্ণ। পচঁন ও পোকা রোধ, রং সজীব রাখা ইত্যাদি কারণে এ সব খাদ্যে প্রয়োগ হচ্ছে ডিডিটি ও হেল্টাকেরা জাতীয় পেস্টিসাইড, ফরমালীন সহ বহু রকম রাসায়নিক উপাদান যে গুলো আমাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য খুবই হুমকিস্বরুপ। রান্নার পরও এর প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। বিভিন্ন ধরণের ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রতি বছর ২ লক্ষ লোক ক্যন্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী জানা যায় খাদ্যমান সঠিক না থাকার কারণে এবং ভেজাল মিশ্রনের ফলে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৮% লোক ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, ১ লক্ষ লোক প্রতি বছর কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চারা অপুষ্টি ও শারীরিক বিকলাঙ্গ হচ্ছে এবং শিশুদের মস্তিস্ক স্বাভাবিক ভাবে বিকাশ লাভ করতে পারছে না।

সেখানে সরকারও এক ধরণের গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে চলার নীতি অবলম্বন করে চলেছে। সরকারের এ উদাসিনতার কারণে বাংলাদেশে প্রস্তুতকারী ও আমদানীকারকদের মধ্যে ব্যবসায়ীক উদ্যেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে এ ধরণের বিষাক্ত খাদ্য নিয়ম বর্ভিূতভাবে আমদানী হচ্ছে। ৩ টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফলাফলে ৮ টি গুড়ো দুধের মধ্যে বিষাক্ত মেলমিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় অথচ আদালতের এক বিভ্রান্তিকর রায়ের কারণে এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারও অব্যাহত আছে। এগুলো ব্যবহারের ফলে সর্বসাধারণের ক্ষতির দায়-দায়িত্ব কে বহন করবে। গুড়ো দুধ ছাড়াও বাজারে অনেক রকম শিশুদের খাদ্য যেমন চকোলেট, ক্যান্ডি, চানাচুর, চিপস,আচার, হজমী,আইসক্রীম, ড্রিংকসসহ নানা ধরনের ভেবারেজ ব্যাপক ভাবে বিক্রয় হচ্ছে যে গুলোর মাঝে প্রচুর পরিমান নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত ক্যামিকেল বিদ্যমান। তা ছাড়াও এ গুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন গুওলো মিথ্যায় ভরপুর।

যা জরুরী ভিত্তিতে করণীয়:

১.খাদ্যের উপযুক্ততা নিশ্চিত না হয়ে শিশুখাদ্য বাজারজাত করা যাবে না; যদি বাজার জাত করা হয় তাহলে শিশুর স্বাস্থ্যগত অপুরনীয় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এবং ক্ষতি হলে এর দায়ভার বহন করবে কে ?
২. মিথ্যা প্রলুব্ধকরণ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে; কেননা খাদ্যের গুনাগুণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয় আমাদের সামনে উপস্থাপিত বিজ্ঞাপনের ভাষাসমূহ।
৩. বানিজ্য মন্ত্রণালয় নয় খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক একটি শক্তিশালী সংস্থা গঠন করতে হবে; স্বাস্থ্য নিয়ে কোন ধরণের বানিজ্য নয় সেহেতু স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত আলাদা সংস্থা হলে তারা শুধু এ বিষয়টির তদারকি করবে।
৪. বিষাক্ত খাদ্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ভোক্তা অধিকার আইন অবিলম্বে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
৫.বাজারজাতকৃত সকল খাদ্য দ্রব্যের ভেজাল ও বিষমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে;
৬ ভোক্তা অধিকার আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত আইনেই দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান






পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন

শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান

শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপে ক্ষতবিক্ষত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, আজ ২৭ এপ্রিল ২০০৮ পবা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বক্তারা বলেন, শেভরনের ভূতাত্ত্বিক জরিপের কারণে প্রচন্ড শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে, শেভরন কোম্পানির লোকেরা ভারী যন্ত্রপাতি ও যানবাহন নিয়ে প্রবেশ এবং বনাঞ্চলের প্রায় ১০০/১৫০ জন লোক প্রবেশ করার প্রেক্ষিতে বনের নিরবতা বা বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, সংরক্ষিত বনের ভিতর জরিপকার্যে নিয়োজিত লোকবল অবাধে ধূমপান করছে।

গত ২৬ এপ্রিল ২০০৮ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র একটি প্রতিনিধিদল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিদর্শনে উদ্যানে এই অবস্থা লক্ষ্য করেন। এর প্রেক্ষিকেই পবা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলে আশেপাশের এলাকার কাচা-পাকা বাড়ীতে ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র কম্পনের ফলে অনেক বন্য প্রাণী বন ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লাউয়াছড়া বনে শুধু শেভরন নয়, গ্রামীণ ফোনও কোম্পানির অপটিক্যাল ফাইভার স্থাপনের জন্য খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন সংরক্ষন বিভাগের কর্মকর্তাদের এই কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্মকর্তাগণ গ্রামীণ ফোনের এ কার্যক্রম সম্পর্কে জানে না বলে পরির্দশন দলের প্রতিনিধিদের জানায়। রেল লাইনের ধারে গর্ত করে এধরনের কার্যক্রম রেল চলাচলের জন্য হুমকি বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ বস্তকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আমাদের বনকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বনকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা না করার কারণেই বনকে অবাধে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু বন আমাদের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। সরকার বন রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একদিকে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে। অপরদিকে এই ধরনের কোম্পানি ও দেশী কিছু স্বার্থানেষী কর্মকর্তা বা ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরামর্শ ও সহযোগিতার কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে। বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞদের মতে বন্য প্রানীরা তাদের বসবাসের জন্য অধিকতর নির্জন স্থানকেই বেছে নিয়ে থাকে। শেভরন কোম্পানীর এই জরিপের ফলে বনের সেই নির্জনতা ও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়েছে। ফলে সংরক্ষিত বনে বসবাসকারী সকল প্রানীর আবাসন বিন্যাস ও জীববৈচিত্র হয়েছে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ এধরনের ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা ও পরামর্শ, তেল কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নামে তেল অনুসন্ধানে বা উত্তোলনের কাজ চালায়। তেল উত্তোলন ও অনুসন্ধানের নামে ধ্বংস করে পরিবেশ, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। ১৯৯৭ সালে ১৪জুন মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের গ্যাসকূপে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পরে বনের ভিতর দিয়ে ইউনোকল গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর ফলে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।

বক্তারা বলেন বিদেশী কোম্পানিগুলো কি আইনের উর্দ্ধে? দেশের পরিবেশবাদীদের অবজ্ঞা করে বিভিন্ন কোম্পানিকে কার্যক্রমের নামে পরিবেশ ধ্বংশের অনুমোদনের উদাহরণ এই প্রথম নয়। আইনকে ভঙ্গ করে এধরনের অনুমোদন কারা প্রদান করে? কি তাদের লাভ? এদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বক্তারা বলেন আমাদের দেশে কাজ করতে হলে অবশ্যই দেশের সকল আইন ও প্রতিষ্ঠানকে মান্য করে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের আইন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবজ্ঞা দেশের সংবিধান, সরকার ও জনসাধারণের প্রতি অবজ্ঞাও। একটি স্বাধীন সার্বভোম দেশে বিদেশী কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতামূলক কার্যকলাপ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

বক্তারা লাউয়াছড়া সংরক্ষিত উদ্যানে শেভরনের ত্রিমাত্রিক জরিপ নিষিদ্ধ, জরিপের কারণে ক্ষতিপুরণ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ, বিগত দিনে ও বর্তমানে দেশের বন ধ্বংশ করে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমোদনকারী ও সমর্থনকারী কর্মকর্তাদের আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তি প্রদান, ভবিষ্যতে সংরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা অনুমোদন না করা, আগামীতে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দেশের ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইনসহ সকল আইন মেনে অনুমোদন দেয়া, অনুসন্ধানকারী কোম্পানির কাছ থেকে বন্ডমানি নেয়া, বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্য করা, সংরক্ষিত স্থানে সরকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে অগ্রধিকার দেওয়া, যে কোন দূর্ঘটনার দায় কী হবে তা সুস্পষ্টভাবে অনুসন্ধানের চুক্তিতে উলে¬খ্য করা, চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং জনগণের মতামত নেয়ার দাবি করেন। বক্তারা বন রক্ষায় সরকার, গণমাধ্যমকর্মী, রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী, শ্রমিকসহ প্রতিটি স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, তেল গ্যাস ও বন্দর ও বিদ্যু রক্ষা কমিটির ইঞ্জিঃ মোঃ শহিদুল্লাহ এবং ব্যারিষ্টার রায়হান খালিদ।

Monday 19 April 2010

বিড়ি কারখানায় কাজ করার কারণে শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে।

বৃহত্তর রংপুর ও কুষ্টিয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রচুর বিড়ি তৈরীর কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের পাশাপাশি প্রচুর শিশুও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছে। এসব শিশুরা সাধারণত নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্যহীন পরিবারের সন্তান। ঝুঁকিপূর্ণ বিড়ি শিল্পে কাজ করার কারণে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ভবিষ্যতে সু নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে।

যে বয়সে ছেলেরা সকালে ¯কুলে যায়, বিকেলে পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যায়, সে বয়সেই সকালের পড়া আর স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে কোমলমতি এই শিশুদেরকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেমে পড়তে হয় উপার্জনের কাজে। ফজরের আজান দিলেই তারা বিড়ি কারখানায় কাজ করতে আসে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। আর্থ সামাজিক অবস্থা খারাপ এবং বিকল্প কাজের সুযোগ না থাকায় শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে। দারিদ্রতার কারণেই শিশুরা এধরনের ঝুঁকিপূর্ন কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

বিড়ি কারখানায় শিশুরা সধারণত কয়েক ধরনের কাজ করছে:
১) তামাক গুড়া করে বিড়ি তৈরীর উপযোগী করা
২) কাগজের রোল তৈরী করা
৩) কাগজের রোলে তামাক ঢুকিয়ে বিড়ি তৈরী করা
৪) বিড়ি প্যকেজিং ইত্যাদি

আন্তর্জাতিক লেবার অফিস, ঢাকা এর ২০০৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় রংপুরের বিড়ি কারখানাগুলোয় ১৭,৩৪৪ জন শিশু শ্রমিক যার ৯,২১৩ জন ছেলে শিমু ও ৮,১৩১ জন মেয়ে শিশু, টাঙ্গাইলের কারখানাগুলোয় ১,৫৭৭ জন শিশু শ্রমিক যার ৬৪৭ জন জেলে শিশু ও ৯৩০ জন মেয়ে শিশু এবং কুষ্টিয়ার কারখানাগুলোয় ২,২৯৬ জন শিশু শ্রমিক কাজ করছে যার ১,৭০১ জন ছেলে শিশু ও ৫৯৫ জন মেয়ে শিশু।

গবেষণার এই তিনটি অঞ্চলের বাইরেও অনেক শিশু বিড়ি কারখানায় কাজ করছে। উপরিউক্ত গবেষণাতেই দেখাযায় গড়ে প্রতিটি পরিবারে রংপুর এলাকায় ২.০৯ জন, টাঙ্গাইল এলাকায় ১.৪৪ জন ও কুষ্টিয়া এলাকায় ১.২০ জন শিশু বিড়ি কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত।

১৯৬৫ সালের কারখানা আইনের ৮৭ ধারা অনুসারে কোন কারখানায় যদি এমন ধরণের কাজ হয় যার ফলে এতে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির দৈহিক আঘাত প্রাপ্ত, বিষক্রিয়া বা দৈহিক আঘাতপ্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে ঐ কাজকে বিপদ জনক কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। বিড়ি কারখানায় কাজের ফলে এতে যুক্ত ব্যক্তিদের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে যা তার শরীরে স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সুতরাং অবশ্যই এটি একটি বিপদ জনক কাজ। এই আইনের ৮৭(গ) ধারায় বিপদ জনক কাজে নারী কিশোর ও শিশুদের নিয়োগ স¤পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন ১৯৩৮, শিশুশ্রম বন্ধ আইন ১৯৩৩, শিশু আইন ১৯৭৪ ইত্যাদি আইনেও শিশু শ্রমের ব্যপারে বিভিন্ন বিধি নিষেধ এবয়
নিষেধ অমান্যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

বিড়ি কারখানা শিশু শ্রমিকেরা মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠা এ কারখানায় শিশু শ্রমিকদের ঝুকিঁর মধ্যে কাজ করতে হয়। বিড়ি তৈরীর সময় তাদের নাকমুখ দিয়ে তামাকের গুড়া প্রবেশ করছে অহরহ। এছাড়া কাজের প্রতিটি মুহুর্ত তারা কাটাচ্ছে তামাকের উৎকট গন্ধের মধ্যে এভাবে তারা মারাত্বক রোগ ক্যান্সারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্সারের পাশাপাশি তারা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, যক্ষা, চোখের বিভিন্ন রোগসহ নানাধরনের জটিল অসুখে ভুগছে। কারখানা গুলোতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থাও নেই। শ্রমিকদের ফ্রি ধূমপানের ব্যবস্থা থাকায় অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করছে। এ সুযোগে বিড়ি তৈরীর সাথে জড়িত সকল শিশু অল্প বয়সেই ধূমপায়ী হয়ে পড়ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে এ সব শ্রমিকদের বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হবার ঝুকিঁ অনেক গুন বেড়ে যাচ্ছে।


আমাদের দেশে শিশুর সংগা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ অনুসারে ১৮ বছরে নীচে সকলকে শিশু বলা হলেও আমাদের দেশে বিভিন্ন আইনে শিশুর সংগায় বিভিন্ন বয়সসীমার কথা বলা হয়েছে। কারখানা আইনের ৬৬ ধারা অনুসারে ১৪ বছরের কম বয়সী কোন শিশুকে কোন ভাবেই কারখানায় নিযুক্ত করা যাবে না। ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুকে শর্ত পুরণ সাপেক্ষে কারখানায় নিযুক্ত করা যাবে। তবে এসব শিশুকে দৈনিক ৫ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। এবং তাদের কাঝের এই ৫ ঘন্টা সকাল ৭টা থেকে সন্ধথ্যা ৭টার মধ্যে হতে হবে। তাছাড়া তার এই কর্ম ঘন্টার মধ্যে তার বিনোদন ও বিশ্যামের ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু বিড়ি কারখানায় শিশু শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি টানা কাজ করছে। এবং সর্ব নিম্ন ৫ বছরের শিশুথেকে সব বয়সী শিশুরা এই কাজে যুক্ত।

একহাজার বিড়ি বাধলে একজন শিশু মজুরী পায় ৯ থেকে ১১ টাকা (স্থান ভেদে ভিন্নতা আছে)। একজন শিশু সারাদিন কাজ করে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আয় করতে পারে।

বিড়ি কারখানায় কাজ করার কারণে শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। লেখাপড়া শিখে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন কুঁড়িতেই নষ্ট হচ্ছে। ফলে তারা একটি দারিদ্রের দুষ্টু চক্রে বাধা পড়ে যাচ্ছে। বাপ-দারা যে দরিদ্র জীবন যাপন করেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় তার থাকছে না। এছাড়া তামাকের মত ক্ষতিকর দ্রব্যের সংস্পর্শে জীবসের একটা এল্লথযোগ্য অংশ কাটানোর কারণে এবং তামাকের ডাস্ট প্রতিনিয়ত শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার ফলে অল্প বয়সেই এরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্ম ক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে তার দারিদ্রতা স্থায়ী রূপ লাভ করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও তা মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিড়ি কারখানার পাশাপাশি বাংলাদেশের তামাক চাষেও প্রচুর শিশু শ্রকি কাজ করছে যার ফলেও নষ্ট হচ্ছে তার ভবিষ্যত এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হওয়ার ঝুঁকি থাকছে তার।

আন্তর্জাতিক শিশু সনদ অনুসারে শিশুর স্বুস্থভাবে বেড় ওঠা ও তার মৌলিক চাহিদা পুরণের নিশচয়তা থাকতে হবে। এবং তা পুরণ করবে রাষ্ট্র। তাছাড়া আমাদের পবিত্র সংবিধানেও শিশুদের স্বুস্থ-সুন্দরভাবে বেড়েওঠার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও তার সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের করণীয় বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।