Showing posts with label Electronics. Show all posts
Showing posts with label Electronics. Show all posts

Thursday, 28 October 2010

তড়িৎ-চৌম্বকীয় দূষণ মানব দেহ, ফল-ফসল ও জীবজগতের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর

বিভিন্ন প্রকার দূষণ আমাদের পরিবেশকে দিন দিন বিষাক্ত করে তুলছে। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, আলোকদূষণ ইত্যাদির মধ্যে আরও একটি গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য দূষণ যুক্ত হয়েছে যা তড়িৎ চৌম্বকীয় দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ। তারহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তির যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের মারাত্মক ক্ষতিকর তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ উপহার দিচ্ছে। বিল্ডিং ও লোকালয়ে বেইজ এন্টিনা স্থাপনে তা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি নষ্ট করে অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। বর্তমান বিশ্বে ইলেক্ট্রনিক্্র যোগাযোগ মাধ্যমকে অগ্রাহ্য করা কঠিন কিন্তু তা ব্যবহার করতে হবে মাত্রারেখে ও অতি সকর্ততার সাথে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সঠিক গবেষণার মাধ্যমে এ নিরব অতি ভয়ানক দূষণকে জনসম্মুখে তুলে ধরা ও সরকারীভাবে রোধ কল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।


তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় ঃ (ক) আয়নাইজিং (খ) নন-আয়নাইজিং। আয়নাইজিং বিকিরণ মানব দেহের ভিতর দিয়ে গমন করলে রক্ত কণা সহ দেহ কোষের অনু সমূহকে আয়োনিত করে। কোষের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয় ও কর্মকান্ড ব্যহত হয় এবং তাৎক্ষনিক মৃত্য বা পরবর্তীতে লিউকোমিয়া ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত কম শক্তি সম্পন্ন তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যাহা রক্ত কনা বা দেহ কোষের অনুকে ভাঙ্গেতে পারেনা তাদেরকে নন-আয়নাইজিং বিকিরণ বলে। তাপ অনুৎপাদকারী নন-আয়নাইজিং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যেমন লিউকেনিয়া, ব্রেইন ক্যান্সার, স্মৃতি শক্তির হ্রাস ও অন্যান্য মারাত্বক রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য যারা শক্তিশালী তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে বেশিক্ষণ অবস্থান করছে তারা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন-পাওয়ার লাইনম্যান, ইলেকট্রিক রেলওয়ে অপারেটর, ইলেকট্রিসিয়ান, ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার প্রভুতি। অন্য পেশাজীবির তুলনায় এরা ব্রেইন কেনসার, লিউকেমিয়া এবং লিমফোম্মিয়ায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে বেশি সময় অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে ব্রেইন কেনসারে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে অবস্থানকারীর তুলনায় আড়াই গুণ বেশি।


শিশু কিশোর ও তরুণ ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য তড়িৎ দূষণে বেশি ঝুঁকিপুর্ণ এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাদের দেহ সমূহ এখনও বর্ধনশীল এবং তরলে পূর্ণ। ফলে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ খুব দ্রুত কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং কোষের মারাত্বক ক্ষতি করে। বর্তমানে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ শুনা যাচ্ছে যে বেইজ এন্টিনা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত টাওয়ারের কারণে ফলন কম এবং নষ্ট হচ্ছে। যা অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। যেমন যে বিল্ডিং এর উপর এন্টিনা স্থাপন করা হয়েছে এর আশে পাশের আম ও নারিকেল গাছে ফল ধরার পরিমাণ কমে গেছে অথবা একবারেই ধরছে না। ফুল অবস্থায়ই ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু এন্টিনা স্থাপনের পূর্বে নিয়মিতভাবে আম গাছে আম ও নারিকেল গাছে নারিকেল ধরত। তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিকগুলি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে একসময় তা আমাদের জন্য মহামারি আকারে ক্ষতি হিসেবে দেখা দিবে। এখন থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার ও বেইজ এন্টেনা ব্যবহারের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমারা থাকা প্রয়োজন।


যোগাযোগের আধুনিক প্রযুক্তি আমরা অবশ্যই ব্যবহার করব কিন্তু তা কোটি জীবনের বিনিময়ে নয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের ও প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ জনগনকে আরো অনেক সচেতন করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে এখনই এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।