Thursday 28 October 2010

ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে যানজট নিয়ন্ত্রণ হ্রাস সম্ভব নয়।

ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে যানজট নিয়ন্ত্রণ হ্রাস সম্ভব নয়। যাতায়াত ব্যবস্থায় কার্যকর মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণে কোন উদ্যোগ নেই। যার প্রেক্ষিতে লাগামহীনভাবে যানজট বেড়ে চলেছে। ঢাকায় পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ হেঁটে, রিকশা, বাসে ও অন্যান্য গণপরিবহনে চলাচল করে। কিন্তু যানজট নিরসনের নামে গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজট হ্রাসে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পাশাপাশি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী।

পথচারীদের বাধ্যতামূলক ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জেল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, এ ধরনের পরিকল্পনার পূর্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীকে নিয়মিত গনপরিবহন ব্যবহার ও হেঁটে চলাচল করে দূভোর্গ অনুধাবনের জন্য পরামর্শ দেন। তারা বলেন, পথচারীরা অপরাধী নয়, শারীরিক কষ্টের কারণে পথচারীদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার সম্ভব নয়। নিরাপত্তার কথা বলে পথচারীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, অথচ বেপরোয়া গাড়ী চালনা বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বৃদ্ধি, নারী, শিশু, ক্লান্ত পথিক, হৃদরোগী, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ ব্যক্তিদের কথা বিবেচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক। এ ধরনের কর্মকান্ড জনমনে রিরূপ প্রভাব ফেলবে, যা সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে।

হকার একটি বৈধ পেশা হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবস্থাপনায় মনযোগ না দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে। নগরে ব্যক্তিগত গাড়ীর জন্য পার্কিং প্রদান করা হচ্ছে কিন্তু মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিন্তু ভেবে দেখা হয় না, হকাররা হেঁটে চলাচলকারীদের আকর্ষন করে এবং নিরাপত্তা দেয়। হকারদের লাইসেন্সের মাধ্যমে বিনিময়ে সুসৃঙ্খলভাবে ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যা বেকার সমস্যার অনেকখানি সমাধানের পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখবে।

ইতিপূর্বে যানজট নিরসনের নাম করে বাস, ট্রাক, রিকশা, ট্রেন এবং পথচারী চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করায় জনসাধারণের হয়রানি বেড়েছে, কোটি টাকা লস হয়েছে অথচ জবাবদিহীতার বালাই নেই। নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গ প্রাইভেট গাড়ির সুবিধাভোগী হওয়ায় এ নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ হয় না।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে জেল প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করা; পথচারীদের নিরাপদ ও সহজে যাতায়াতে জ্রেবা ক্রসিং ফিরিয়ে আনা; হকারদের লাইসেন্সের বিনিময়ে ফুটপাতে সুসৃঙ্খলভাবে বসার ব্যবস্থা করা; এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প এর পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ করা; সাইকেলের জন্য পৃথক লেন ও স্ট্যান্ড তৈরিসহ চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা; সিটি বাসের সঙ্গে আন্তঃনগর বাস, রেল ও নৌ-পথের সমন্বয় করা; ঢাকার চারপাশের নদী এবং অভ্যন্তরীণ খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণ করে নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; ঢাকার সর্বত্র রিকশায় চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি করা এবং নিরাপত্তার জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা; প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করা; নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা; সর্বত্র পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে ঘন্টা হিসেবে পার্কিং ফি গ্রহণ করা; প্রাইভেট কারের লাইসেন্স বরাদ্দ সীমিত করা প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment