Thursday 27 September 2012



জলাশয় রক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ


বৃটিশ শাসনামল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলাশয় সংরক্ষণ আইনসহ প্রায় দুইশত আইন কোন না কোনভাবে জলাশয় দূষণ ও দখল প্রতিরোধ, সংরক্ষণ ও রক্ষা বা এ সম্পর্কিত বিষয় উল্লেখ করেছে। কিন্তু এসব আইন বাস্তবায়নও কোন একক সংস্থার কাছে না থাকায় আইনের বাস্তবায়ন শিথিলভাবে হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন বাস্তবায়নই হচ্ছে না। তাছাড়া দখল ও দূষণকারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শ আইন বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হয়। তাই ঢাকাসহ সারাদেশের পুকুর, লেক, খাল, নদী রক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার সর্বাগ্রে প্রয়োজন পাশাপাশি জলাশয় রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ আইন ও এর বাস্তবায়নে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করা দরকার।


, লেক, পুকুর, খাল, নদীসহ সব জলাশয় রক্ষায় বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করলেও পূর্ণাঙ্গ কোন প্রতিষ্ঠান নাই। রাজউক, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কতৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ইত্যাদি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করছে। এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকায় কোন প্রতিষ্ঠানই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় কিংবা শুধু জলাশয় রক্ষায় স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি এখন সময়ের দাবি।

 লেকসহ সব জলাশয়ের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নেয়া হয় না বলেই এসব দখল ও দূষণ হচ্ছে। অথচ মৎস চাষ, কৃষিকাজ, বিনোদন, ভূ-গর্ভের পানির স্তর স্বাভাবিক রাখা ইত্যাদি নানা প্রয়োজনে জলাশয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু তাৎক্ষনিকভাবে লাভবান হবার জন্যই এসব জলাশয়গুলো ভরাট করে দখল ও ভবন নির্মাণ চলছে। এ প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তার প্রবন্ধে বলেন, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জলাশয় রক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করলেও তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় সঠিকভাবে কাজ হচ্ছে না। যে কারণে দেখা যায়, জলাশয় রক্ষা করতে গিয়ে তারাও জলাশয়ের ক্ষতি করে ফেলেন। তবু সাম্প্রতিক সময়ে সুনামগঞ্জ পৌরসভা, বরিশাল সিটি করপোরেশন স্থানীয় নদীর পাড়কে বিনোদনকেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা ঢাকার পাশ্ববর্তী নদী ও জলাশয়ের জন্য অনুকরণীয়।

 নগরে জলাশয় অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুকুর, খাল, নদী-এসব জলাশয় নগরের প্রাণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জলাশয় না থাকলে নগরের তাপমাত্রা শুধু বৃদ্ধি পায় না, নগরে পানির স্তরও নীচে নেমে যায়। তাই জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান জরুরি। ড. গোলাম রহমান বলেন, অতীতে ঢাকায় অনেক খাল ছিল। খালকে কেন্দ্র করে ঢাকার অভ্যন্তরে নৌপথ ছিল। কিন্তু উন্নয়নের নামে অনেক খাল ধ্বংস হয়েছে। উন্নয়ন মানে পরিবেশ ধ্বংস নয়, এ ভাবনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।


 বাংলাদেশে অসংখ্য আইন আছে, মহামান্য আদলতের নির্দেশনাও আছে। কিন্তু এসব যাদের বাস্তাবয়ন করার কথা, তারা নিরব। রাজউক আদালতে স্বীকার করেছে গুলশান-বারিধারা লেক সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু দায় স্বীকার করলেইতো চলবে না। এসব উদ্ধারে বিদ্যমান আইন ও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আরও সক্রিয় হতে হবে।

 জলাশয়ে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় একটা শ্রেণী দুর্বৃত্তায়নই দায়ী। কোন সাধারণ মানুষ ও দরিদ্র মানুষ জলাশয় দখল করছে না বা করতে পারে না। যারা দখল ও দূষণকারী, এরা প্রভাবশালী। কিন্তু এখন মানুষ নিজের প্রয়োজনেই সক্রিয় হচ্ছে, সোচ্চার হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও আইন বাস্তবায়নে নিজস্ব ক্ষমতার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গণমাধ্যম-সবার সহযোগিতা করা দরকার।


No comments:

Post a Comment