Friday 31 October 2014

বন বিড়ালগুলোর হত্যা দায় কে নিবে ? কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ চাই।

বন বিড়াল দ্রুত দৌড়াতে পারে, পানিতে ভাল সাঁতার কাটতে পারে, গাছে চড়তে পারে, ঝোপ-ঝাড় থেকে প্রায়ই শূণ্যে লাফিয়ে শিকার ধরে। অর্থাৎ জলে স্থলে শূণ্যে সবখানেই সে শিকারে পারদর্শী। প্রথম বন বিড়ালের সাথে আমার দেখা হয় কৈশরে। স্কুলের পুকুর পাড়ের একটি মুরগীর শিকারের দায়ে এলাকাবাসী পানিতে চুবিয়ে বন বিড়ালটিকে হত্যা করা হয়। তারপর আর বন বিড়াল দেখা হয়নি। গত সপ্তাহে ধানমন্ডি বছিলায় এক সৌখিন পশু পালনকারী খাচায় কয়েকটি বন বিড়াল দেখি। তিনি বিড়ালগুলো ধরেছেন বছিলা ও মোহাম্মদপুর বেড়ি বাঁধ এলাকা থেকে। তারপর থেকে তার খাচায় এই শিকারী প্রাণীর বদ্ধ জীবন ঝাপন চলছে। একটা পারদর্শী শিকারী কতটা অসহায় জীবন যাপন করতে পারে তার প্রমাণ মিলে ঐ সৌখিন পশু পালনকারী খামারের গেলে। তার অভিযোগ বিড়ালগুলো তার খামারের মুরগী,কবুতর, নানা প্রজাতির পাখি হত্যা করে । তাই ব্যবসায়ী স্বার্থে তিনি তাদের হত্যা কিংবা আটক করা ছাড়া বিকল্প কিছু করা নেই ।


ছর পাঁচ আগেও বছিলা, মোহাম্মদপুর বেড়ি বাঁধ এলাকায় প্রচুর বন বিড়াল পাওয়া যেত। কিছু আশেপাশের ঝোপঝাড় কেটে ফেলায়, আবাসন কোম্পানীগুলো নদীর তীরের ঘন কাশবনগুগো দখল করে আবাসন প্রকল্প বাস্তাবায়ন করায়। বিড়ালগুলো বাসস্থানের অভাব দেখা দিচ্ছে। কিন্তু এখনও ঢাকা নগরের খুব কাছাকাছি যে বন্যপ্রাণী আছে তার প্রমাণ এই বনবিড়ালগুলো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই বনবিড়ালগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।



এই বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকারে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে তাদের একাধিকবার বিভিন্ন সময় জানিয়ে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। কতৃপক্ষের একটি জরুরী সেল ফোন নাম্বার আছে “ বন্যপ্রানী অপরাধ দমন হটলাইন ০১৭৫৫৬৬০০৩৩” ইমেল wccubd@gmail.com গত কয়েকদিনে একাধিক বার তাদের ফোন দিয়ে অপেক্ষায় থাকুন। অপেক্ষায় থাকুন ছাড়া আর কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। এই চারটি বন বিড়াল রক্ষায় যদি আমরা প্রতিবারে ন্যায় এবার ও কতৃপক্ষের অবহেলার জন্য ব্যর্থ হই। তবে সভা, সেমিনারে পরিবেশ রক্ষা ভাষণ আর শ্লোগানে গলা ফাটিয়ে চিৎকারই চলবে। বছর শেষে কোটি টাকা ব্যয়ে ছাপানো পুস্তুকে লিখা হবে বন বিড়ালের ছবি, বর্ণনা। আর বিপন্ন তালিকা থেকে মহা বিপন্নের তালিকায় যুক্ত হবে বনবিড়ালের নাম। এক সময় হারিয়ে যাবে বন বিড়াল। আমরা যে প্রাণীগুলো ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছি তার দায় কার এই নিয়ে বিস্তর যুক্তি তর্ক থাকবে। কিন্তু এই চারটি বন বিড়াল হত্যার দায় নিসন্দেহে বন্যপ্রানী অপরাধ দমন নিয়ন্ত্রনের নিয়োজিত কতৃপক্ষের। কারণ তাদের দায়িত্বহীন আচরণের জন্যই প্রাণীগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।


বনবিড়াল বিষয়ক তথ্য: ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত

বন বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Felis chaus Ges এবং ইংরেজি নাম Jungle Cat। দেহের আকার ৬০ সে.মি.ও লেজ ২৬ সে.মি.। দেহের রঙ ধূসর-বাদামী মেশান। গলার নিচের পশম হালকা। দেহের পেছনের অংশে, পায়ে এবং লেজে বেশ কিছু কালো রঙের ডোরাকাটা দাগ আছে। লেজের শেষ প্রান্ত কালো রঙের। চোখের নিচে লম্বা কালো রঙের দাগ আছে। এদের প্রজননকাল ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

No comments:

Post a Comment