Thursday 28 October 2010

স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে হাঁটার জন্য জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে আনুন | ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক

স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে হাঁটার জন্য জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে আনুন | ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক

ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার বৃদ্ধ, মহিলা, শিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং মালামাল নিয়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য সহায়ক নয়। অথচ অনেকের পক্ষে অসম্ভব এই কাজটি না করলে ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ঘন্টার জেল প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল সাপেক্ষে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিন।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জনগনকে বাধ্য করতে ২৪ ঘন্টার জেল দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে। যে সকল ব্যক্তিরা মন্ত্রীকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ দেয় তাদের থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। কোন ব্যক্তিগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ মন্ত্রীর জন্য বাঞ্চনীয় নয়। বরং জনস্বার্থ রক্ষা ও জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রীর কার্যক্রম সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে। এজন্য অবিলম্বে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রয়োজন। বক্তারা দূর্ঘটনা হ্রাসে শহরে গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেন। পাশাপাশি ঢাকার সর্বত্র জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে এনে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর জোরারোপ করেন।

ঢাকার ৬০% চলাচল হয় পায়ে হেঁটে। পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বললেও পথচারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য কোন পদক্ষেপ নেই। ঢাকা পৃথিবীর একটি শহর যেখানে এত সংখ্যক পথচারী থাকা স্বত্বেও বর্তমানে কোন জ্রেবা ক্রসিং নেই বললেই চলে, অথচ একসময় এই পদ্ধতিতেই রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মূলত গাড়ি চলাচলকে প্রাধান্য দিতেই পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মত অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। হেঁটে চলা মানুষের অধিকার, অথচ এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যাদের শারীরিকভাবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের হাঁটার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

ঢাকা শহরে বিভিন্নভাবে পথচারীদের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে লোহার গ্রীল, প্রাইভেট গাড়ী পার্কিং করে ফুটপাত দখল, স্থাপনার জিনিসপত্র ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা, ফুটপাত সংকুচিত করা, বাড়ী ও দোকানে গাড়ি ঢোকাতে ফুটপাতে কিছুক্ষণ পরপর কেটে নিচু করাসহ বিভিন্নভাবে মানুষ হেঁটে চলাচলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। অথচ হাটার জন্য কম জায়গা দরকার, দূষণ হয় না, জ্বালানী ব্যয় নাই। সবচেয়ে বড় কথা হেঁটে চলাচলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এ সকল বিবেচনায় সারা বিশ্বজুড়ে শহরে পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরো সুসংহত করছে। অথচ ঢাকা শহরে সকল সিদ্ধান্ত, আইন-নীতিমালা, প্রকল্প সবকিছুতেই পথচারীদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পার্বত্য জেলাসহ সর্বত্র তামাক চাষ নিষিদ্ধ করুন

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পার্বত্য জেলাসহ সর্বত্র তামাক চাষ নিষিদ্ধ করুন | খাদ্যের জমি ধ্বংস ও ক্ষতিকর খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ করায় জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, জীববৈচিত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া তামাক চাষ খাদ্য সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। তামাক চাষ কৃষি জমিকে ক্রমশ ধবংশ করছে। জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে তামাক কোম্পানিগুলো নতুন নতুন এলাকায় উর্বর খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ করানোর জন্য নানারকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দরিদ্র ও নিরক্ষর কৃষকদের তামাক চাষে ধাবিত করছে। তাই অবিলম্বে খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। এবং দরিদ্র ও নিরক্ষর কৃষকদের তামাক চাষে ধাবিত করার জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তামাক চাষের জন্য জমি তৈরি, চারা রোপন, পাতা তোলা ও তামাক গাছ উৎপাদন ইত্যাদির জন্য আগষ্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৮ মাস সময় লাগে। তামাক চাষের কারণে বছরের প্রধান তিনটি মৌসুমের ফসলই নষ্ট হয়। তামাক চাষের কারণে আলু, বেগুন, টমেটো, মূলা, বাদাম, কপি, মিষ্টি কুমড়া, সরিষা, গম, নানারকম ডাল, পেয়াজ, তরমুজ সহ সকল রবিশষ্য ও ঢেড়শ, বরবটি, করলা, ঝিঙ্গা, পালংশাক, পুইশাক, ডাটা, পাটশাকসহ শীতকালীন সব সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া সময়ের মারপ্যাচে আমন ধান ও বোরো ধান চাষ করা যায় না তামাক চাষের জমিতে, যে কারণে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন।

বাংলাদেশে যে পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, সে জমিগুলোতে খাদ্য চাষ করলে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দূর করা সম্ভব। তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় গোখাদ্য সংকট, শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ব্যহত, তামাকজনিত রোগ ও মানুষের মৃত্যু বৃদ্ধিসহ পারিবারিক ও সামাজিক সংকট বেড়ে যাচ্ছে। বান্দরবানসহ পার্বত্য জেলাগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র সবই হুমকির সম্মুখীন। তাই পার্বত্য জেলাসহ সর্বত্রই খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা দরকার।

দেশের কৃষি জমি ও বনভূমি রক্ষা, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ, খাদ্যসংকট মোকাবেলায় কৃষি জমিতে তামাক চাষ বন্ধ করা, বনায়নের নামে তামাক কোম্পানিগুলোর বৃক্ষরোপনের নামে বিদেশী গাছ লাগানো নিষিদ্ধ করা এবং দরিদ্র কৃষকদের দরিদ্রতার চক্রে ধাবিত করা ও তামাক চাষে ধাবিত করায় তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা।

ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে যানজট নিয়ন্ত্রণ হ্রাস সম্ভব নয়।

ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে যানজট নিয়ন্ত্রণ হ্রাস সম্ভব নয়। যাতায়াত ব্যবস্থায় কার্যকর মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণে কোন উদ্যোগ নেই। যার প্রেক্ষিতে লাগামহীনভাবে যানজট বেড়ে চলেছে। ঢাকায় পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ হেঁটে, রিকশা, বাসে ও অন্যান্য গণপরিবহনে চলাচল করে। কিন্তু যানজট নিরসনের নামে গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজট হ্রাসে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পাশাপাশি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী।

পথচারীদের বাধ্যতামূলক ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জেল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, এ ধরনের পরিকল্পনার পূর্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীকে নিয়মিত গনপরিবহন ব্যবহার ও হেঁটে চলাচল করে দূভোর্গ অনুধাবনের জন্য পরামর্শ দেন। তারা বলেন, পথচারীরা অপরাধী নয়, শারীরিক কষ্টের কারণে পথচারীদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার সম্ভব নয়। নিরাপত্তার কথা বলে পথচারীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, অথচ বেপরোয়া গাড়ী চালনা বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বৃদ্ধি, নারী, শিশু, ক্লান্ত পথিক, হৃদরোগী, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ ব্যক্তিদের কথা বিবেচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক। এ ধরনের কর্মকান্ড জনমনে রিরূপ প্রভাব ফেলবে, যা সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে।

হকার একটি বৈধ পেশা হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবস্থাপনায় মনযোগ না দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে। নগরে ব্যক্তিগত গাড়ীর জন্য পার্কিং প্রদান করা হচ্ছে কিন্তু মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিন্তু ভেবে দেখা হয় না, হকাররা হেঁটে চলাচলকারীদের আকর্ষন করে এবং নিরাপত্তা দেয়। হকারদের লাইসেন্সের মাধ্যমে বিনিময়ে সুসৃঙ্খলভাবে ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যা বেকার সমস্যার অনেকখানি সমাধানের পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখবে।

ইতিপূর্বে যানজট নিরসনের নাম করে বাস, ট্রাক, রিকশা, ট্রেন এবং পথচারী চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করায় জনসাধারণের হয়রানি বেড়েছে, কোটি টাকা লস হয়েছে অথচ জবাবদিহীতার বালাই নেই। নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গ প্রাইভেট গাড়ির সুবিধাভোগী হওয়ায় এ নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ হয় না।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে জেল প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করা; পথচারীদের নিরাপদ ও সহজে যাতায়াতে জ্রেবা ক্রসিং ফিরিয়ে আনা; হকারদের লাইসেন্সের বিনিময়ে ফুটপাতে সুসৃঙ্খলভাবে বসার ব্যবস্থা করা; এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প এর পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ করা; সাইকেলের জন্য পৃথক লেন ও স্ট্যান্ড তৈরিসহ চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা; সিটি বাসের সঙ্গে আন্তঃনগর বাস, রেল ও নৌ-পথের সমন্বয় করা; ঢাকার চারপাশের নদী এবং অভ্যন্তরীণ খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণ করে নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; ঢাকার সর্বত্র রিকশায় চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি করা এবং নিরাপত্তার জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা; প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করা; নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা; সর্বত্র পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে ঘন্টা হিসেবে পার্কিং ফি গ্রহণ করা; প্রাইভেট কারের লাইসেন্স বরাদ্দ সীমিত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে অদুরদর্শী পরিকল্পনা অন্তরায়

দীর্ঘদিন পর কিছু ঋণ প্রদানকারী সংস্থা রেলের উন্নয়নে ঋণ প্রদান করে। কিন্তু এ সকল ঋণ সহায়তায় রেল উন্নয়নে স্টেশন রি মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা কিভাবে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে তা একটি স্টেশনের উদাহরণ থেকেই অনুমান করা যথেষ্ট। রি মডেলিং প্রকল্পের একটি স্টেশন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন। এই জংশন স্টেশনের রি মডেলিং বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়, ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ওই স্টেশনের ইন্টার লকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তন বাবদ আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অর্থাৎ সর্ব সাকুল্যে ২৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা স্টেশন রি মডেলিং বরাদ্দ দেয়া হয়। এই রি-মডেলিংয়ের টাকা থেকে অনধিক ২৫ কোটি টাকায় একটি অত্যাধুনিক রেল ইঞ্জিন ক্রয় বা সংগ্রহ করেও অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কাঁচামালের যোগান দেয়াসহ রেলওয়ে কারখানায় ওভার টাইম চালু করে কমপক্ষে ২০টি ইন্টারসিটি ট্রেনের অকেজো শোভন চেয়ার কোচ মেরামত করা যেত। ওই মেরামতকৃত কোচ ও সংগ্রহকৃত ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গঠিত আন্তনগর ট্রেনটি ঢাকা চট্টগ্রাম লাইনে চলাচলের ফলে রেলের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেতো প্রায় ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার উর্ধে। অথচ দেড়শ কোটি টাকার অধিক ভর্তূকি প্রতিষ্ঠানে এহেন রি-মডেলিং মানে রেলওয়েকে বাকীর খাতায় শূন্যই গুনতে হচ্ছে। বর্তমান সময়কালে অন্য যেসব স্টেশন রি-মডেলিংয়ের কাজ হয়েছে বা হচ্ছে তন্মধ্যে নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া,শায়েসত্মাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কুমিল্লা, লাকসাম ও ফেনী স্টেশন উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া পশ্চিমাঞ্চলেও এরকম বহু স্টেশন টেকসই কাজের পরিবর্তে নিম্নমানের কাজ করিয়ে অধিক অর্থ অপচয়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঋণের টাকা যখন সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন রি-মডেলিং করা হচ্ছে, ঠিক সমসাময়িক ঘটনা হচ্ছে অর্থের অভাবে সিলেট-খাজাঞ্চি-ছাতক রেলপথ সংস্কার করা যাচ্ছে না, ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক মাসে রেল লাইন সংস্কারের অভাবে অনেক দূর্ঘটনা হয়েছে এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। অথচ টাকা নেয়া হচ্ছে স্টেশন আধুনিক করা জন্য। [sb]মানুষ যদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গনত্মব্যে পৌছতে পারে তবে স্টেশনে বসে থাকবে কেন? [/sb]স্টেশন আধুনিক করা অপেক্ষা রেল লাইন উন্নয়ন করা জরুরি, জরুরি রেলের বগি ও ইঞ্জিন বাড়ানো। একদিকে বলা হচ্ছে ঋণ ছাড়া চলা সম্ভব নয়, অপর দিকে এমন খাতে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া হচ্ছে যা অপ্রয়োজনীয়। যেসব স্টেশন রি-মডেলিং করা হয়েছে সেসব স্টেশনের আয় বৃদ্ধি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা, মূল্যায়ণ করে জনসম্মুখে তুলে ধরা প্রয়োজন। কারণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিক জনগণ। রেলওয়ে জাতীয় সম্পদ বিধায় রেলের মালিকও আপামর জনগণ এবং তাদের এ তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।

আন্তজার্তিক অর্থলগ্নিকারী (ঋণ বাণিজ্যিক) প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের চেয়ে সড়ক পথের উন্নয়নে বেশী আগ্রহী। দ্বিতীয়ত ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো শর্তসাপেক্ষে রেলওয়ের উন্নয়নখাতে সরকারকে ঋন দিয়ে থাকে যা স্টেশন রি মডেলিংয়ের মত অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। তৃতীয়ত তথাকথিত ঋণ সংস্থার পরামর্শ ও দিক নির্দেশায় অনেক উন্নয়ন গৃহীত হচ্ছে। ফলে দেশীয় অনেক প্রেক্ষাপটের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায়, আশানুরূপ উন্নয়ন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দেশীয় বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা জরুরি। আন্তজাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে বিভিন্ন উন্নয়ন নীতিমালা প্রণীত হয়। অভিযোগ রয়েছে এ সকল পরামর্শ যা দেশের শিল্প কারখানা ও সেবা খাতগুলোর উন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হতে নিরুৎসাহিত করে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুবাদে এ দেশকে বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিণত করতে দেশের শিল্প কারখানা ও সেবা খাতগুলোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে পরিশেষে সবকিছু ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ প্রদানই এসব সহযোগীদের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে অনেকেই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। বিগত দিনে উন্নয়নের নামে এই এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই খুলনা বাগেরহাট, মোগল হাট লালমনির হাট, ভেড়ামারা-রায়টা, নরসিংদী-মদনগঞ্জসহ বিভিন্ন রেলপথ বন্ধের মাধ্যমে সংকোচন করা হয়েছে।

রেলওয়েতে দীর্ঘদিন ধরে স্টেশন রিমডেলিং এর মতো বিদেশী ঋণপ্রদানকারী সংস্থার ঋণের অর্থ প্রকৃতপক্ষে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে যা আদৌ এ মুহূর্তে জরুরী প্রয়োজন ছিলনা বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে রেলওয়ে সেবাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়ক হতো সেসব খাতে যথেষ্ট বরাদ্ধ নেই। ফলে রেলের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত ঋণের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে বছরের পর বছর চলে যাবে। বস্তুতপক্ষে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কারণে রেলের সত্যিকার উন্নয়ন হয়ে উঠেছে বাধাগ্রসত্ম, যা কারো কাম্য নয়। রেল লাইনের সংস্কার নেই, বগি নেই, ইঞ্জিন নেই ইত্যাদি সমস্যা জর্জরিত রেলওয়ে এহেন বেহাল দশা থেকে উত্তোরণে উপযুক্ত খাতে ঋণের টাকা ব্যয় না করে শুধু স্টেশন রিমডেলিং করার অর্থ হলো আশীতিপর বৃদ্ধাকে মেকাপ লাগিয়ে অষ্টাদশী তরুনী বানানোর ব্যর্থ চেষ্টারই নামানত্মর মাত্র।

ঋণ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন এ অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে? এ ঋণ হতে কি পরিমান লাভ হবে? যদি দেখা যায়, স্টেশন আধুনিকায়নের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু রেল লাইন সংস্কার, ইঞ্জিন বা বগি ক্রয়ের সমস্যার জন্য রেল যোগাযোগ বিঘি্নত করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের ঋণ গ্রহন না করা উচিত। মৌলিক প্রয়োজনের পরিবর্তে এ ধরনের ঋণ গ্রহন অপচয়। কারণ এ ধরনের অহেতুক ঋণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে দূর্বল করা হয়।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের চার বছর মেয়াদী চলমান সংস্কার কর্মসূচীকে ঘিরে খোদ রেলওয়েসহ বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, এডিবি'র ঋণ ও পরামর্শ সংস্কারের নামে বাংলাদেশ রেলওয়েকে পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করার পায়তারা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবং অনুযোগ সর্তকতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ যে সকল প্রতিষ্ঠানে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে তা আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তর স্বার্থে এডিবির ঋণে চলমান সংস্কার কর্মসূচী মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

কতটা গতির দরকার? কতটা গতিতে চললে রিকশা ঢাকায় চলতে পারবে?

যানজট একটি আমাদের সবার জন্য সমস্যা আর এই সমস্যাকে পুজিঁ করে দেশি বিদেশি ব্যবসায়ীক শ্রেনী নেমে পড়েছে ব্যবসায়। জনগণকে জিম্মি করে তারা বছরের পর বছর ঢাকায় জনগণের টাকায় কিংবা ঋণের টাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু যানজট কমেনি। শুধু প্রকল্পের বৃদ্ধিই ঘটছে ধারাবাহিক ভাবে। এই রকম অনেক প্রকল্প নিয়েই সুনিদিষ্ট তথ্যসহ তাদের ব্যবসার কথা জনগন ইতিমধ্যে জেনেছে।

গতকাল ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার সাথে জড়িত একটি বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তার কথা আজ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি রিকশা নিয়ে কথা বলছেন রিকশা ধীর গতি সম্পন্ন যান। আর তাই মহাসড়কে রিকশা উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু অতীতেও বিভিন্ন রাস্তা থেকে রিকশা উচ্ছেদ করা হয়েছে ফলাফল শুভ হয়নি। যাত্রীদের যাতায়াত সময়-ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, যানজট বৃদ্ধি, পরিবহণ কোম্পানীগুলোর পরিবহণ পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু পোস্টটি বড় হয়ে যাবে ভেবে কয়েকটি পোস্ট দিব ঠিক করলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের পোস্ট " রিকসা কি আসলেই ধীর গতি সম্পন্ন যান‍"আজ এই ফোরামে এই বিষয়টি নিয়ে লিখছি আমাদের সবার যাতে রিকসা ধীর গতি সম্পন্ন যান এই সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তন ঘটে। রিকশা উচ্ছেদের অন্য কোন কারণ থাকতে পারে কিন্তু ধীর গতি সম্পন্ন যান তা উচ্ছেদের যুক্তি সই কারণ নয়।
রিকসা কি আসলেই ধীর গতি সম্পন্ন যান?
যখন অধিকাংশ যান্ত্রিক যানবাহন অযান্ত্রিক যানবাহন অপেক্ষা গতিশীল, তখন গতি আসলেই বিবেচ্য একটি বিষয়। কিন্তু জনবহুল শহরের প্রেক্ষিতে গতির বিষয়টি একটু ব্যতিক্রম। ঢাকা শহরের বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে স্বল্প পরিমান জায়গায় অনেক লোক চলাচল করে থাকে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সৃষ্টি হয় যানজটের। ঢাকার মতো বিশ্বের অন্য শহরগুলোতেও এই সমস্যা বিরাজমান। অযান্ত্রিক যান না থাকা এবং ব্যয়বহুল রাস্তা নির্মাণের পরও বিশ্বের অধিকাংশ শহর থেকে এ সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।

মধ্য লন্ডনে গাড়ির গতিবেগ ঘন্টায় ৮ কিঃ মিঃ যা ১৮৮০ সালে ঘোড়ার গাড়ির সমপরিমান। কখনো কখনো এ গতি সাইকেল থেকেও ধীর এবং কখনো কখনো পায়ে হেটে চলাচলের সমপরিমান হয়। বাইসাইকেলে ঘন্টায় ১০-১৫ কিঃমিঃ বা তার চেয়েও বেশি যাওয়া যায়। ঢাকা যে সকল রাস্তায় অনেক আগেই অযান্ত্রিক যান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে এখন অসহনীয় যানজট বিরাজ করছে এবং সার্বিক যাতায়াতের সময়সীমাও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় যান্ত্রিক যানবাহনে শহরের দূরবর্তী এলাকায় যেতে রিকসা/বাইসাইকেলের প্রায় সমান সময় প্রয়োজন হয়। সেখানে রাস্তায় যেহেতু কোন অযান্ত্রিক যানবাহন নেই সেহেতু সেখানকার রাস্তার গতিহীনতার জন্য অযান্ত্রিক যানবাহনকে দায়ী করা যাবে না। অর্থাৎ যান্তিক যান নিষিদ্ধ করেও ভাল কোন সুফল পাওয়া যাবে না। বরং অধিক যান্ত্রিক যানের কারণে এই রাস্তাগুলোতে অত্যাধিক হারে বায়ুদূষণ ঘটছে এবং যাতায়াতের অনুপোযোগি হয়ে পড়ছে।

মিরপুর রোড, ভিআইপি রোড থেকে রিকশা উচ্ছেদ করা হয়েছে কিন্তু যানজট আগের চেয়ে বেড়েছে। তাহলে রিকশার সাথে যানজটের বিষয়টি আমাদের কাছে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে?সমস্যা অন্য জায়গায় একটু লক্ষ্য করুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ফিলিপাই, ইন্দোনেশিয়া যানজটপূর্ণ শহরগুলোর কথা। তাদেরই বিভিন্ন পরামর্শ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শহরগুলো যানজটের শীর্ষস্থান অধিকারী শহর হিসেবে নাম লিখাতে পেরেছে। তারা সেখানেও একই ভাবে রিকশা উচ্ছেদ করেছে। ওখানে ব্যর্থ যানজট সমাধানে কাল্পনিক চেষ্টায় এখন যানজট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বেড়েছে তাদে কয়েক গুণ। আমাদের দেশেও একই র্ফমুলা প্রয়োগ করা হচ্ছে।

আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে নয়তো আমাদের প্রিয় ঢাকা ব্যাংককের মত যানজটপূর্ণ শহর হবে। ব্যাংককে মোট্রে রেল, স্কাইরেল, ফ্লাইওভার, নৌপথ সবই আছে। সাথে আছে প্রচন্ড যানজট। পাশপাশি ওদের ব্যবসা কিন্ত প্রতিবছরই বাড়ছে। আসুন চিনে নেই তাদের নয়তো আমাদেরও যানজট আর যানজট শব্দের ফাঁদে ফেলবে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে। কিন্তু যানজট থেকে মুক্তির স্বপ্ন আমাদের স্বপ্নই থাকবে।

ছবিটি যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রিকশা উচ্ছেদের জন্য একটি ঋণবাণিজ্যিক সংস্থা আমাদের দেশের নীতি নির্ধারনী সংস্থাদের সরবারহ করেছেন। আর কর্তারা যানজট নিরসনের কোন যুতসই কাজ না করে শুধুমাত্র সেই প্রতিষ্ঠানের সরবারহকৃত ম্যাপের বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছেন। যা বাস্তবায়ন হলে ঢাকায় যানজট বৃদ্ধি পাবে তা তাদেরই গবেষণায় সুস্পষ্ট। আমরা কোন পথে যাব তা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে।

তড়িৎ-চৌম্বকীয় দূষণ মানব দেহ, ফল-ফসল ও জীবজগতের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর

বিভিন্ন প্রকার দূষণ আমাদের পরিবেশকে দিন দিন বিষাক্ত করে তুলছে। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, আলোকদূষণ ইত্যাদির মধ্যে আরও একটি গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য দূষণ যুক্ত হয়েছে যা তড়িৎ চৌম্বকীয় দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ। তারহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তির যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের মারাত্মক ক্ষতিকর তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ উপহার দিচ্ছে। বিল্ডিং ও লোকালয়ে বেইজ এন্টিনা স্থাপনে তা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি নষ্ট করে অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। বর্তমান বিশ্বে ইলেক্ট্রনিক্্র যোগাযোগ মাধ্যমকে অগ্রাহ্য করা কঠিন কিন্তু তা ব্যবহার করতে হবে মাত্রারেখে ও অতি সকর্ততার সাথে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সঠিক গবেষণার মাধ্যমে এ নিরব অতি ভয়ানক দূষণকে জনসম্মুখে তুলে ধরা ও সরকারীভাবে রোধ কল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।


তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় ঃ (ক) আয়নাইজিং (খ) নন-আয়নাইজিং। আয়নাইজিং বিকিরণ মানব দেহের ভিতর দিয়ে গমন করলে রক্ত কণা সহ দেহ কোষের অনু সমূহকে আয়োনিত করে। কোষের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয় ও কর্মকান্ড ব্যহত হয় এবং তাৎক্ষনিক মৃত্য বা পরবর্তীতে লিউকোমিয়া ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত কম শক্তি সম্পন্ন তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যাহা রক্ত কনা বা দেহ কোষের অনুকে ভাঙ্গেতে পারেনা তাদেরকে নন-আয়নাইজিং বিকিরণ বলে। তাপ অনুৎপাদকারী নন-আয়নাইজিং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যেমন লিউকেনিয়া, ব্রেইন ক্যান্সার, স্মৃতি শক্তির হ্রাস ও অন্যান্য মারাত্বক রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য যারা শক্তিশালী তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে বেশিক্ষণ অবস্থান করছে তারা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন-পাওয়ার লাইনম্যান, ইলেকট্রিক রেলওয়ে অপারেটর, ইলেকট্রিসিয়ান, ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার প্রভুতি। অন্য পেশাজীবির তুলনায় এরা ব্রেইন কেনসার, লিউকেমিয়া এবং লিমফোম্মিয়ায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে বেশি সময় অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে ব্রেইন কেনসারে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে অবস্থানকারীর তুলনায় আড়াই গুণ বেশি।


শিশু কিশোর ও তরুণ ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য তড়িৎ দূষণে বেশি ঝুঁকিপুর্ণ এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাদের দেহ সমূহ এখনও বর্ধনশীল এবং তরলে পূর্ণ। ফলে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ খুব দ্রুত কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং কোষের মারাত্বক ক্ষতি করে। বর্তমানে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ শুনা যাচ্ছে যে বেইজ এন্টিনা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত টাওয়ারের কারণে ফলন কম এবং নষ্ট হচ্ছে। যা অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। যেমন যে বিল্ডিং এর উপর এন্টিনা স্থাপন করা হয়েছে এর আশে পাশের আম ও নারিকেল গাছে ফল ধরার পরিমাণ কমে গেছে অথবা একবারেই ধরছে না। ফুল অবস্থায়ই ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু এন্টিনা স্থাপনের পূর্বে নিয়মিতভাবে আম গাছে আম ও নারিকেল গাছে নারিকেল ধরত। তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিকগুলি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে একসময় তা আমাদের জন্য মহামারি আকারে ক্ষতি হিসেবে দেখা দিবে। এখন থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার ও বেইজ এন্টেনা ব্যবহারের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমারা থাকা প্রয়োজন।


যোগাযোগের আধুনিক প্রযুক্তি আমরা অবশ্যই ব্যবহার করব কিন্তু তা কোটি জীবনের বিনিময়ে নয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের ও প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ জনগনকে আরো অনেক সচেতন করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে এখনই এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।