অধ্যাদেশ ১৯৫৯ মিথ্যা প্রচারণার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে ১৯ ধারার (১) এ
বলা আছে, কোন ব্যক্তি এমন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করিবেন না, তাহা কোন
খাদ্যবস্তুকে মিথ্যাভাবে বর্ণনা করে বা এর প্রকৃতি, বস্তু বা মান সর্ম্পকে
ভিন্নরূপ ধরাণা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ
আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারায় বলা আছে, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারনখে
প্রতারিত করিবার দন্ড। -কোন ব্যক্তি কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে
অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিলে তিনি
অনুর্ধ্ব এক বৎসর কারাদন্ড, বা অনাধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয়
দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
দুনিয়াব্যাপী বহুজার্তিক কোম্পানীগুলো
মুনাফাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নীতি নৈতিকাকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না।
নামকরা কোমল পানীয় কোম্পানীগুলো অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারে র্শীষে। আমাদের মত
দেশগুলোতে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা না থাকায় কোম্পানীগুলো
অসত্য,মিথ্যা, বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে তাদের পণ্যের প্রচার করছে। এক্ষেত্রে
কোমল পানীয় কোম্পানীগুলো অপ্রতিরোধ্য।
মনোলোভা বিজ্ঞাপন দিয়ে কোমল
পানীয়ের নামে বিষ তুলে দেয়া হচ্ছে শিশুদের। বিজ্ঞাপনের চমৎকারিত্বের আড়ালে
মানুষকে প্রতারিত করে অবাধে ক্ষতিকর কোমল পানীয় বেচা-কেনা চলছে। শিশুদের
স্কুলের গেইট, এমনকি পুলিশের থানার গেইটে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।
ভারতে হিমাচল প্রদেশের মানালী-রোহতাং হাইওয়ের দুপাশের পর্বতে পাথড়ে গায়ে
রং দিয়ে কোকাকোলা ও পেপসি তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়। সুপ্রীম কোর্ট ২০০২
সালে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রত্যেক কোম্পানীকে ২লাখ টাকা করে জরিমানা করে। ভারতে
সংসদীয় কমিটি তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে কোকাকোলা-পেপসি তাদের ভ্রান্ত
বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। শিশুদের আকৃষ্টি করেই কোম্পানীগুলো
বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি করা হয়।
কয়েক যুগ ধরে ভ্রান্ত তথ্যেও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোমল পানীয় কোম্পানীগুলো
ইতিমধ্যে একটি প্রজন্মের কাছে কোমল পানীয় মানে স্বাস্থ্যকর, বিশুদ্ধ পানীয়
রূপে নিজেদের পরিচয় নিয়েছে। বাংলাদেশে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপনের কোন
নিয়ন্ত্রণই নেই। যথাযথ কতৃপক্ষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে মুনাফালোভী,
ক্ষতিকরণ কোমল পানীয় তাদের অনৈতিক, ভ্রান্ত তথ্য নির্ভর বিজ্ঞাপন প্রচারে
মাধ্যমে মানুষদের আকৃষ্টি করেই যাচ্ছে।
এক বাক্যে বলা যায় কোমল
পানীয় ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয় বিলাসী পানীয়। কেবলমাত্র জনমত তৈরি করেই এর
ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। সচেনতার পাশাপাশি এই ক্ষতিকারক পানীয়টি
নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সুনিদিষ্ট আইন। সরকারী ও সামাজিক ভাবে কিছু
উদ্দ্যোগ গ্রহন করলে বহুলাংশে কোমল পানীয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
যেমন :
কোমল পানীয় বোতল এবং মোড়কে স্বাস্থ্য সর্তকবাণী লিখতে হবে। কোমল পানীয়তে কি
পরিমাণ কীটনাশক থাকে তা উল্লেখ্য করতে হবে। শিশুদের বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন
এবং চারপাশের একটি নিদিষ্ট সীমানায় কোমল পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে।
কোমল
পানীয় প্রতি ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়াতে হবে। র্সবপরি কোমল পানীয় নিয়ন্ত্রণে
একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ সকল প্রকার প্রচার
মাধ্যমে কোমল পানীয় বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে।
শুধুমাত্র
অর্থনীতির দোহাই দিয়ে বিষাক্ত কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে সরকারের দায়িত্ব
এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে আমরা ব্যবসা চাই কিন্তু
জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি, সংস্কৃতি বিকিয়ে দিয়ে ব্যবসার করার
অধিকার রাষ্ট্রেকে কেউ দেয়নি। তাই জনস্বার্থে মানবদেহের জন্য তিকর কোমল
পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment